ময়মনসিংহের ভালুকায় ট্রাক্টর-অটোরিকশা সংঘর্ষে দুই যাত্রীর মৃত্যু

আজ শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার গোয়ারী ভাওয়ালিয়া বাজু বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে ভালুকা-গফরগাঁও সড়কে একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। দ্রুতগামী মাহিন্দ্রা ট্রাক্টরের সঙ্গে যাত্রীবাহী অটোরিকশার সংঘর্ষে অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত এবং চালক আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন উপজেলার চান্দারাটি নদীর পাড় এলাকার আবদুল ওয়াদুদের ছেলে মনির হোসেন (৪০) এবং সাতেঙ্গা এলাকার আবদুল হাইয়ের ছেলে মো. হামিদ (৩০)। আহত অটোরিকশাচালক ধলিয়া এলাকার আহমদ মিয়ার ছেলে শাহজালাল (৪০) প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভালুকাগামী একটি যাত্রীবাহী অটোরিকশা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উক্ত স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী মাহিন্দ্রা ট্রাক্টরের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মনির হোসেন মারা যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত দুজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মো. হামিদকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভালুকা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, “ট্রাক্টরের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন।”
ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবীর জানান, নিহতদের মরদেহ পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ট্রাক্টরটি আটক করা যায়নি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ক্রমবর্ধমান হার
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫,৩৮০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের পর সরকার আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর বাস্তবায়নের অভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। ফলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ক্রমাগত বাড়ছে।
সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তা
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, যানবাহনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই মূল্যবান প্রাণ হারাচ্ছে, যা দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তাই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা: প্রতিরোধ ও করণীয়
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:
- ট্রাফিক আইন মেনে চলা: চালক ও পথচারীদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সেগুলো মেনে চলতে হবে।
- গতি নিয়ন্ত্রণ: নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম না করা এবং অতিরিক্ত গতি পরিহার করা উচিত।
- সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার: মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট এবং গাড়ি চালকদের সিটবেল্ট ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।
- চালকদের প্রশিক্ষণ: পেশাদার চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত।
- জনসচেতনতা বৃদ্ধি: সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে গণমাধ্যম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা একটি নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। এতে করে দেশের উন্নয়ন ও জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।