যশোরের গদখালীতে ফুলের বাজারে মন্দাভাব: চাষিদের উদ্বেগ

যশোরের গদখালী, যা বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিত, এবারের বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের বিক্রি প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ১৮ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে।
ফুলের দরপতন ও চাহিদার ঘাটতি
এ বছর ফুলের চাহিদা ও দাম উভয়ই গত বছরের তুলনায় কম। বিশেষ করে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরা—সব ধরনের ফুলের দাম কমেছে। ফুলচাষি আজিজুর সরদার জানান, তিনি প্রতিটি গোলাপ ৩ টাকায়, জারবেরা ৪ টাকায় এবং লিলিয়াম ২০ টাকায় বিক্রি করছেন, যা উৎপাদন খরচও পূরণ করতে পারছে না।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রভাব
ব্যবসায়ীদের মতে, বিশ্ব ইজতেমা, ওরস ও শবে বরাতসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর কারণে ফুলের চাহিদা কমেছে। এর ফলে বাজারে ফুলের দামও কমে গেছে। এছাড়া, হঠাৎ গরম পড়ায় ফুল বেশি ফুটেছে, যা সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং দাম কমিয়েছে।
চাষিদের ক্ষতি ও হতাশা
তাওরা গ্রামের গোলাপচাষি মিলন হোসেন বলেন, “প্রতিটি গোলাপের দাম ৭-৮ টাকার বেশি কেউ বলছেন না, যা উৎপাদন খরচও উঠছে না।” পটুয়াপাড়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম বাবু জানান, ৩৬ শতক জমিতে গোলাপ চাষে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু বিক্রি থেকে সেই খরচ তুলতে পারছেন না।
আবহাওয়ার প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর জেলার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আবু তালহা জানান, যশোর জেলায় ৬৩৭ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে, যেখানে প্রায় তিন হাজার চাষি সম্পৃক্ত। তবে, হঠাৎ গরম পড়ায় ফুলের অতিরিক্ত প্রস্ফুটন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
চাষিদের ভবিষ্যৎ আশা
ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আগামী বছরগুলোতে বাজারের চাহিদা ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিবেচনা করে চাষাবাদ ও বিপণন কৌশল উন্নত করে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। তারা মনে করেন, যদি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়, তবে ফুলের বাজার আবারও চাঙ্গা হবে।
যশোরের গদখালীতে ফুলের বাজারের এই মন্দাভাব চাষিদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। তারা আশা করছেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের পাশে দাঁড়াবে এবং ফুলচাষিদের জন্য সহায়তা প্রদান করবে। ফুলের চাষ বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই এর উন্নয়ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
ফুলচাষিরা তাদের শ্রম ও সময় দিয়ে যে ফুল উৎপাদন করেন, তা দেশের মানুষের আনন্দের উৎস। তাই তাদের এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহায়তা।