এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে ১১ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি বিভাগ এগিয়ে

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য পিছিয়ে রয়েছে ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এ সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ কম। বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ চিত্র
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১ লাখ কোটি টাকা এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। তবে গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো মাত্র ৫৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে, যা মোট বরাদ্দের ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ।
গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ, অর্থাৎ এবার বাস্তবায়ন হার কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ২১ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
কোন মন্ত্রণালয় কতটা এগিয়ে?
এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। এ বিভাগের বাস্তবায়ন হার ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইএমইডি, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এডিপি বাস্তবায়নে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যার বাস্তবায়ন হার মাত্র শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের বাস্তবায়ন হার ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে।
বাস্তবায়ন কমার কারণ
এডিপি বাস্তবায়ন কমার পেছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব, তহবিল বরাদ্দে জটিলতা, বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তিতে দেরি এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা। এছাড়া চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতাও এডিপি বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এডিপি বাস্তবায়নের হার কমে যাওয়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তারা মনে করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুততা আনতে এবং তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তারা।
সরকারের পদক্ষেপ
এডিপি বাস্তবায়ন বাড়াতে সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, তহবিল বরাদ্দে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জটিলতা কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ
এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে সরকারকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জটিলতা কমানো এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
উপসংহার
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার কমে যাওয়া দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সরকার ইতিমধ্যে এডিপি বাস্তবায়ন বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুততা আনতে এবং তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে পারলে এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তারা।