অর্থনীতি

আইসিসিবিতে চলছে দেশি-বিদেশি ৮০০ কোম্পানী প্লাস্টিক মেলা

দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক প্রদর্শনী কেন্দ্র আইসিসিবি এক্সপো ভিলেজ বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ১৭তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক মেলা। দেশি-বিদেশি ৮০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে, যা প্লাস্টিক শিল্প খাতের সাম্প্রতিক উন্নতি, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির প্রদর্শনীর এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। চার দিনব্যাপী এই মেলা চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত।

মেলার উদ্বোধন ও প্রধান অতিথিদের বক্তব্য

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত এই মেলার উদ্বোধন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান এবং সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি সামিম আহমেদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, “প্লাস্টিকের ভালো-মন্দ দুটি দিক রয়েছে। আমাদের করণীয় হলো পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিকের প্রসার ঘটানো এবং ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করা। পাশাপাশি, পাটসহ অন্যান্য টেকসই বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই খাতে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ মানুষ কর্মরত রয়েছে এবং দেশে প্রায় ছয় হাজার প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক শিল্পে সক্রিয়। এই খাত থেকে বছরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হয়, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

প্লাস্টিক শিল্পের সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ

মেলায় বাংলাদেশসহ চীন, ভারত, জার্মানি, ইতালি, জাপান, তুরস্ক, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি, নতুন উদ্ভাবন এবং উন্নতমানের প্লাস্টিক পণ্য প্রদর্শন করছে।

সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “বর্তমানে প্লাস্টিক ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনা করা কঠিন। খাদ্য সংরক্ষণ, চিকিৎসা, পোশাক শিল্প, নির্মাণ, গৃহস্থালী ব্যবহারসহ প্রতিটি খাতে প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। প্লাস্টিকের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি।”

তিনি আরও বলেন, “কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাছ কাটা থেকে বিরত থাকতে প্লাস্টিকপণ্য ভূমিকা রাখছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক। তবে প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।”

বাংলাদেশে প্লাস্টিক শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্প বর্তমানে দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। দেশে প্লাস্টিক রপ্তানির চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, বিশেষ করে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার বাজারে। সরকার এই খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন নীতিগত সুবিধা প্রদান করছে, যার মধ্যে রয়েছে কর অবকাশ, সহজ শুল্কনীতি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা।

বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশের প্লাস্টিক খাত এখন একটি রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। আমরা আশা করছি, আগামী পাঁচ বছরে এই খাতের রপ্তানি আয় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে।”

তিনি আরও বলেন, “প্লাস্টিক শিল্পে কাঁচামালের আমদানি নির্ভরতা কমাতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে, পরিবেশবান্ধব এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।”

আইসিসিবি এক্সপো ভিলেজ: দেশের বৃহত্তম প্রদর্শনী কেন্দ্র

বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রদর্শনী কেন্দ্র ‘আইসিসিবি এক্সপো ভিলেজ বাংলাদেশ’ ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী এবং দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এর আয়তন ১ লাখ ৩৪ হাজার বর্গফুট এবং এটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

আইসিসিবির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) এম. এম. জসীম উদ্দীন বলেন, “এই এক্সপো ভিলেজ শুধু প্রদর্শনী নয়, বড় ধরনের করপোরেট ইভেন্ট, সমাবর্তন, কনসার্ট, পরীক্ষার হল, বাণিজ্য সম্মেলন, ওয়েডিং অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শেড।”

এই ভেন্যুতে ১০ হাজারেরও বেশি লোকের সমাবেশ সম্ভব। এছাড়া পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিং সুবিধা, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি মনিটরিং এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

প্লাস্টিকের টেকসই ব্যবহারের দিকে দৃষ্টি

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্লাস্টিক শিল্পের উন্নতির পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিং এবং বিকল্প উপকরণের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে হবে।

পরিবেশবিদদের মতে, প্লাস্টিক ব্যবহারের পাশাপাশি তার সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে বহুব্যবহারযোগ্য এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের প্রচলন বাড়াতে হবে।

এই প্লাস্টিক মেলা শুধু ব্যবসায়িক উদ্যোগ নয়, বরং বাংলাদেশের শিল্প খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং বাংলাদেশকে প্লাস্টিক শিল্পের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button