গাজা নিয়ে ট্রাম্পের ‘ধোঁকা’, প্রত্যাখ্যান আরব নেতাদের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি গাজা নিয়ে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন, যা আরব নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, “গাজা আমাদের হবে। এই এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেব এবং তা ধরে রাখব।”
ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কোন অধিকারে গাজার দখল নিতে চান। তিনি জানান, “আমেরিকার নিজস্ব অধিকারে।” তবে গাজার ২৫ লাখ ফিলিস্তিনির ভবিষ্যৎ নিয়ে তার বক্তব্য ছিল আরও বিতর্কিত। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনিরা জর্ডান ও মিসরে চলে যাবে, দরকার হলে অন্যান্য আরব দেশে চলে যাবে। তাদের জন্য চমৎকার আবাসনের ব্যবস্থা হবে, যাতে তারা ফিরে আসার প্রয়োজন অনুভব না করে।”
ধোঁকা বা কৌশল?
মার্কিন থিঙ্কট্যাংক কার্নেগি এন্ডাউমেন্টের বিশ্লেষক এন্ড্রু লবের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য আসলে একটি ধোঁকা, যার উদ্দেশ্য ইসরায়েলের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা আদায় করা। যুক্তরাজ্যের চ্যাথাম হাউসও একই মত প্রকাশ করেছে। তাদের ভাষ্য, ট্রাম্পের প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রশ্নে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
বাদশাহ আবদুল্লাহর অবস্থান
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের পাশে বসে থাকা জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ কোনো কঠিন কথা বলেননি। তবে পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, “জর্ডানের পক্ষে নতুন করে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু গ্রহণ সম্ভব নয়।” তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের নিজ বাসভূমে রেখেই পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছেন।
জর্ডানের উদ্বেগ
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের জর্ডানে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর অনেক ফিলিস্তিনি জর্ডানে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে তারা জর্ডানের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। বাদশাহ আবদুল্লাহ নিজ অস্তিত্বের স্বার্থে নতুন কোনো ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু চান না। তিনি ২০২৩ সালে বলেছিলেন, “গাজার ফিলিস্তিনিদের জর্ডানে ঠেলে পাঠানো হবে না। এটি আমাদের জন্য প্রকৃত ‘রেড লাইন’।”
মার্কিন সাহায্যের প্রভাব
জর্ডান দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে তারা বার্ষিক দেড় বিলিয়ন ডলার সাহায্য পেয়ে থাকে। ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, “যদি জর্ডান গাজার ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ না করে, তাহলে এই সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।” তবে পরে তিনি জানান, “এমন কিছু হবে না।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গাজার ২৫ লাখ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা অসম্ভব বলে মনে করছেন অধিকাংশ দায়িত্বশীল মহল। জাতিসংঘ মহাসচিবও বলেছেন, এটি হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ট্রাম্পের প্রস্তাবের পর সৌদি যুবরাজ সালমান বিন মোহাম্মদও ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করেছেন।
আরব নেতাদের মধ্যে সহযোগিতা
মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের গাজা প্রস্তাবের পর আরব দেশগুলো নতুন করে সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলছে। বাদশাহ আবদুল্লাহ যুবরাজ সালমানসহ অন্যান্য আরব নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তারা মার্কিন ও ইসরায়েলি অবস্থানের মুখে একটি অভিন্ন আরব পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছেন।
গাজার পুনর্গঠন পরিকল্পনা
ওয়াশিংটনে বাদশাহ আবদুল্লাহ ও জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে গাজা পুনর্গঠনের একটি রূপরেখা তৈরি করেছেন। তারা গাজাবাসীকে না সরিয়েই সেখানে নতুন নির্মাণ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করছেন।
ট্রাম্পের গাজা নিয়ে মন্তব্য এবং আরব নেতাদের প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি নতুন মোড় নিয়ে আসছে। গাজার পরিস্থিতি এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে আলোচনা এখন আরও জোরালো হচ্ছে। আশা করা যায়, এই আলোচনা ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ