রোজার আগেই বেক্সিমকোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ: শ্রম উপদেষ্টা

পবিত্র রমজান শুরুর আগেই বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। আগামী ১ মার্চ রমজান শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পাওনা পরিশোধের জন্য অর্থসংস্থান কীভাবে হবে, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।
বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
আজ বুধবার সচিবালয়ে ‘বেক্সিমকো শিল্পপার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সপ্তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে শ্রম উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
পাওনা পরিশোধের অগ্রগতি
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “গত ২৮ জানুয়ারির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বেক্সিমকোর লে-অফকৃত কোম্পানিগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। আজকের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভালো অগ্রগতি হয়েছে এবং চলতি মাসের মধ্যেই পাওনা পরিশোধ করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “পাওনা পরিশোধের জন্য অর্থসংস্থান করা হচ্ছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি আবার বৈঠক হবে, যেখানে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে পাওনা অর্থ পাঠানো হবে। আমরা চাই রোজা শুরুর আগেই এই পরিশোধ নিশ্চিত করতে।”
শ্রমিকদের সংখ্যা ও পাওনার পরিমাণ
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শ্রম উপদেষ্টা জানান, শ্রমিক-কর্মচারীদের সংখ্যা ২৭ হাজারের বেশি। তবে পাওনার নির্দিষ্ট পরিমাণ এখনো নির্ধারিত হয়নি। নতুন প্রশাসক ৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, ফলে পুরো বিষয়টি এখনো তাঁর হাতে আসেনি।
অর্থ সংস্থানের উৎস
বেক্সিমকো গ্রুপের চালু থাকা দুই কোম্পানি—বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকসের উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ করা হবে নাকি রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হবে, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে, ১৮ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে এটি নিশ্চিত হবে। অর্থ বিভাগ থেকে সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা রয়েছে, যা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
শ্রমিকদের বিকল্প চাকরির ব্যবস্থা
একজন সাংবাদিক জানতে চান, লে-অফ হওয়া শ্রমিকদের জন্য কোনো বিকল্প চাকরির ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না। উত্তরে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “তাঁরা এখনো বেক্সিমকোর শ্রমিক। আমি বলতে পারি না ১০০ জন এখানে যান, ৫০০ জন ওখানে যান। তবে তাঁরা সবাই দক্ষ শ্রমিক, তাই তাঁদের বেকার থাকার আশঙ্কা নেই। সরকারও চায় না এত সংখ্যক শ্রমিক বেকার হোক।”
তিনি আরও বলেন, “পোশাক খাতে বর্তমানে ৫ থেকে ৭ শতাংশ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) ও বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) মাধ্যমে শ্রমিকদের নতুন কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করা হচ্ছে।”
বেক্সিমকোর ঋণ পরিস্থিতি
বেক্সিমকো শিল্পপার্কের আওতায় থাকা ৩১ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকঋণ ২৮ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। এই ঋণের বিপরীতে জমি, ভবন, যন্ত্রপাতি, শেয়ার, এবং ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) মিলিয়ে বন্ধক রাখা সম্পদের মূল্য ৪ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৭.২৪ শতাংশ।
বন্ধ হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১২টির অস্তিত্বই নেই বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এর বেশিরভাগই জনতা ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ।
শেষ কথা
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, শ্রমিকদের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করা হবে এবং তাঁদের কর্মসংস্থানও বজায় থাকবে। এটি সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত বিষয়। আগামী বৈঠকে আমরা আরও বিস্তারিত জানাতে পারব।