খেলাক্রিকেট

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটার সোহেলি আক্তার পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞায়: স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নারী খেলোয়াড় সোহেলি আক্তারকে পাঁচ বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছে। ২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে, এবং দীর্ঘ তদন্তের পর এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কী ঘটেছিল?

২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলছিল। এই ম্যাচের আগে, দলের বাইরে থাকা সোহেলি আক্তার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলা বাংলাদেশ দলের এক সদস্যকে মুঠোফোনে স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন। ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবে তিনি বড় অঙ্কের টাকার লোভও দেখান।

এ ঘটনার পর, সেই খেলোয়াড় প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বিষয়টি আইসিসির দুর্নীতি দমন কমিটির (এসিইউ) কাছে জানিয়ে দেন। এই রিপোর্ট পাওয়ার পর, আইসিসি বিষয়টি দ্রুত তদন্ত শুরু করে এবং দুই বছর ধরে অনুসন্ধান চালায়। তদন্তে, সোহেলি আক্তারের স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া এবং দুর্নীতির সাথে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

আইসিসির সিদ্ধান্ত

আইসিসির অ্যান্টি-করাপশন কোডের পাঁচটি বিধি লঙ্ঘনের জন্য সোহেলি আক্তারকে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়। সোহেলি তার অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং এ কারণে তার শাস্তি পেতে হয়েছে।

আইসিসি জানিয়েছে, সোহেলি আক্তার এই অপরাধের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সুনামের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন এবং এর ফলে ক্রিকেটের খেলাধুলার প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও সম্মান কমেছে। তাই, তার বিরুদ্ধে এ ধরনের কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

বিসিবির প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং তারা জানিয়েছে যে, বিসিবি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তারা আরও বলেছে, দলের সদস্যদের মধ্যে দুর্নীতির সাথে কোনো সম্পর্ক থাকার বিষয়টি ঘটলে তা জানিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের কাছে সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকবে। বিসিবি আশা করছে, সোহেলির মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সোহেলির ক্রিকেট ক্যারিয়ার

সোহেলি আক্তার বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন। ২০২২ সালের পর থেকে তাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ মেলেনি। তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে, তিনি দুটি টি-টোয়েন্টি এবং ১৩টি ওয়ানডে ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ পর্যন্ত তিনি ১১টি উইকেট শিকার করেছেন এবং রান করেছেন ৬টি।

২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে সোহেলির। তিনি বাংলাদেশ নারী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বিবেচিত ছিলেন এবং তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দলের সাফল্যের জন্য তার অবদান ছিল। তবে, এই দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর তার ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল ভবিষ্যতটি তলানিতে পৌঁছেছে।

স্পট ফিক্সিং: ক্রিকেটের একটি বড় সমস্যা

স্পট ফিক্সিং ক্রিকেট বিশ্বে একটি বড় সমস্যার রূপ নিয়েছে। খেলোয়াড়দের দুর্নীতির প্রস্তাব গ্রহণ এবং এই ধরনের অপরাধে লিপ্ত হওয়া ক্রিকেটের মান ও নীতির প্রতি মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। স্পট ফিক্সিংয়ের মাধ্যমে খেলোয়াড়রা ম্যাচের কিছু নির্দিষ্ট মুহূর্তে ফলাফল প্রভাবিত করে টাকা উপার্জনের চেষ্টা করে, যা পুরো খেলার অখণ্ডতাকে নষ্ট করে।

বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি এই ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং প্রতিটি অভিযোগের ব্যাপারে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে যথাযথ শাস্তি প্রদান করে। এর মাধ্যমে তারা একটি শক্তিশালী বার্তা দিতে চায় যে, দুর্নীতির জন্য কোনো ধরনের সহানুভূতি বা ছাড় দেওয়া হবে না।

আইসিসি’র দুর্নীতি দমন কার্যক্রম

আইসিসি দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিকেটের দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ক্রিকেটারেরা যাতে স্পট ফিক্সিং বা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো কাজে জড়িত না হন, সেজন্য নিয়মিত সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। আইসিসি দুর্নীতি দমন বিভাগ (এসিইউ) ক্রিকেট বিশ্বে এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে এবং বিভিন্ন খেলোয়াড়কে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি প্রদান করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে যুব খেলোয়াড়দের দুর্নীতি থেকে দূরে রাখার জন্য আইসিসি বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে আগামী দিনে ক্রিকেটের সুনাম অক্ষুণ্ন থাকে।

উপসংহার

সোহেলি আক্তারের পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটি মর্মাহত অধ্যায়। তবে এটি বিশ্ব ক্রিকেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা প্রেরণ করেছে। আশা করা যাচ্ছে যে, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না এবং ক্রিকেট তার মূল নীতির উপর চলতে থাকবে। খেলোয়াড়দের জন্য সতর্কতা এবং সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে, যাতে তারা সঠিক পথ অনুসরণ করতে পারে এবং নিজেদের ক্যারিয়ারকে সুস্থ ও সাফল্যমণ্ডিত রাখতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button