বানিজ্য

সিঙ্গাপুর থেকে চাল ও আরব আমিরাত থেকে এলএনজি আমদানি অনুমোদন

বাংলাদেশ সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি আজ এক বৈঠকে সিঙ্গাপুর থেকে চাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আরও বেশ কিছু ক্রয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি

বাংলাদেশ খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের অ্যাগ্রো কর্প ইন্টারন্যাশনাল পিটিই, এলটিডি থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল আমদানি করা হবে। এই চালের জন্য সরকারের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি টন চালের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৩৪ দশমিক ৭৭ মার্কিন ডলার। এর আগে সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির জন্য আলোচনা করলেও সর্বোত্তম মূল্য ও সরবরাহ সক্ষমতা বিবেচনায় সিঙ্গাপুরের এই প্রতিষ্ঠানকেই নির্বাচন করা হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চাল আমদানি হলে দেশের চালের মজুদ আরও শক্তিশালী হবে এবং বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে। এদিকে, সরকারি ক্রয় কমিটির অনুমোদনের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে।

আরব আমিরাত থেকে এলএনজি আমদানি

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড থেকে এক কার্গো (৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ) এলএনজি আমদানি করা হবে। প্রতি এমএমবিটিইউর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৭৭৫০ মার্কিন ডলার। এতে এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ৭৭৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

এলএনজি আমদানির মাধ্যমে দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণ এবং শিল্প উৎপাদন স্থিতিশীল রাখা হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ ঘাটতির কারণে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং এলএনজি আমদানির মাধ্যমে এই ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “বাংলাদেশে শিল্প, বিদ্যুৎ ও গৃহস্থালি খাতে গ্যাসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে আমরা নিয়মিতভাবে এলএনজি আমদানি করছি যাতে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বজায় থাকে।”

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি

বৈঠকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির একটি প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের জন্য পূর্বে নির্ধারিত চুক্তিমূল্য ছিল ৫০ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে নতুন চুক্তিমূল্য দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অতিরিক্ত ২০ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি বিবেচনায় প্রকল্পের পরিধি সম্প্রসারিত করা হয়েছে, ফলে বাজেট পুনর্নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।”

চাল ও এলএনজি আমদানির প্রভাব

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা আরও সুসংহত হবে। বিশেষ করে, চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে, এলএনজি আমদানির ফলে গ্যাস সংকট কিছুটা লাঘব হবে, যা শিল্প খাত ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এসব আমদানি চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি ও খাদ্যশস্যের মূল্য ওঠানামার ফলে ভবিষ্যতে এই খাতে আরও কৌশলগত পরিকল্পনার প্রয়োজন হবে।

উপসংহার

বাংলাদেশ সরকারের ক্রয় কমিটির এই সিদ্ধান্ত খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে এসব আমদানি কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে ভবিষ্যতে বৈশ্বিক বাজারের ওঠানামা ও মুদ্রার বিনিময় হার বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button