বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের আকৃতি

বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রভাগ উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। এই নতুন তথ্যের মাধ্যমে আমাদের বাসযোগ্য গ্রহের গভীরের রহস্য সম্পর্কে আরও কিছু জানা গেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর কেন্দ্রের আকৃতি বদলে যাওয়ার বিষয়টিও তারা শনাক্ত করেছেন।
অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের গঠন
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রটি গরম, কঠিন ধাতব বলসদৃশ। এর চারপাশে তরল ধাতবের একটি স্তর রয়েছে। গ্রহ বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে অনুমান করছিলেন যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর ভেতরের কঠিন কেন্দ্রভাগ বিকৃত হয়েছে। তবে বর্তমানে প্রথমবারের মতো তারা প্রমাণ পেয়েছেন যে, গত ২০ বছরে ভূ-কেন্দ্রের আকৃতিতে এ বিকৃতি ঘটেছে। ভূমিকম্পের তরঙ্গের মাধ্যমে এই বিকৃতির চিহ্ন ধরা পড়েছে।
নতুন গবেষণার ফলাফল
নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করেছেন। তারা দেখেছেন, অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র একসময় পৃথিবীর চেয়ে দ্রুতগতিতে ঘুরেছে। তবে ২০১০ সালের শুরুর দিকে কেন্দ্রের ঘূর্ণনের গতি মন্থর হয়ে আসে। বর্তমানে এটি পৃথিবীর অন্যান্য অংশের তুলনায় উল্টো দিকে ঘুরছে।
নতুন গবেষণার ফলাফল সোমবার নেচার জিওসায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় ১৯৯১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একই জায়গায় সংঘটিত ভূমিকম্পের তরঙ্গ সম্পর্কিত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
গবেষণার নেতৃত্ব
গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া বিজ্ঞানী ও ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক জন ভিদেল বলেন, “পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রভাগের ঘূর্ণন নিয়ে বিজ্ঞানীরা এর আগে যে কাজ করেছেন, তা ভূকম্পনজনিত তরঙ্গের উচ্চতার পার্থক্য ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করেছে। এই পার্থক্যই সংজ্ঞায়িত করছে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের উপরিভাগের পরিবর্তনকে।”
শক্তির উৎস
গবেষকেরা জানান, ভূ-কেন্দ্রের আকৃতির পরিবর্তন পৃথিবীর গভীরে অবস্থিত শক্তিগুলোর সূত্র সম্পর্কে ইঙ্গিত দিতে পারে। এই শক্তিগুলো আমাদের চৌম্বকমণ্ডলের শক্তির জোগান দেয়। চৌম্বকীয় শক্তির এই অদৃশ্য রেখা আমাদের গ্রহকে সৌর আবহাওয়া ও প্রাণঘাতী বিকিরণ থেকে রক্ষা করে।
নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
নিউ জার্সির রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ইয়োশি মিয়াজাকি বলেন, “নতুন গবেষণায় অঘূর্ণয়নশীল পরিবর্তনের বিষয় উঠে এসেছে। এটি আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। আমি মনে করি, এটি পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের ঘূর্ণন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিতর্ককে আরও উসকে দেবে।”
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের আকৃতির পরিবর্তন এবং ঘূর্ণনের নতুন তথ্য আমাদের গ্রহের গঠন ও কার্যক্রম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করে। এই গবেষণা ভবিষ্যতে আরও গভীর গবেষণার পথ খুলে দিতে পারে এবং আমাদের পৃথিবী সম্পর্কে নতুন তথ্য উন্মোচন করতে সহায়তা করবে।