বিশ্ব

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মোহাম্মদ বিন সালমানের শক্ত অবস্থান

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। মিডল ইস্ট আইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক ডেভিড হার্স্ট এই বিষয়ে একটি বিশ্লেষণমূলক লেখা প্রকাশ করেছেন। লেখাটি ১০ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে।

সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক

সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে গত কয়েক বছরে গোপন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সম্পর্কের কথা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “প্রায় তিন বছর ধরে আমাদের মধ্যে গোপন সম্পর্ক রয়েছে।” নেতানিয়াহুর এই মন্তব্যের পর সৌদি আরবের অবস্থান নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

যুবরাজের অবস্থান

মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হওয়ার আগে সাধারণ রাজপুত্র ছিলেন। ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছাতে গিয়ে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সৌদি আরবে ক্ষমতা অর্জনের জন্য তেল আবিব ও ওয়াশিংটনের সমর্থন প্রয়োজন। যুবরাজ হওয়ার পর তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে শুরু করেন। ২০১৭ সালে তিনি গোপনে ইসরায়েল সফর করেন এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করেন।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের প্রতি মন্তব্য

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নিন্দা জানিয়ে যুবরাজ বিন সালমান বলেছিলেন, “ফিলিস্তিনের উচিত ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় বসা অথবা ‘চুপ থাকা’।” এই মন্তব্য ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

হামাসের হামলার প্রেক্ষাপট

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলের ওপর হামলার পর সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তখন সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। তবে হামাসের হামলার পর সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

ট্রাম্পের মন্তব্য

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে।” এই মন্তব্য সৌদি আরবের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সৌদি আরব দ্রুত ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাব দেয় এবং জানায়, “পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।”

আরব বিশ্বের প্রতিক্রিয়া

নেতানিয়াহুর মন্তব্যের পর আরব দেশগুলো একত্রিত হয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। মিসর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য আরব দেশ নেতানিয়াহুর বক্তব্যের নিন্দা জানায়। সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল বলেন, “ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

নতুন পরিস্থিতি

গাজা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের পর মিসর ঘোষণা করেছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি আরব লিগের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে নতুন এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।

মোহাম্মদ বিন সালমানের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে শক্ত অবস্থান গ্রহণের বিষয়টি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরবের এই অবস্থান ফিলিস্তিনিদের জন্য আশার আলো হতে পারে। তবে, বাস্তবতা হলো, সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের উন্নতি ফিলিস্তিনের স্বার্থের জন্য কতটা সহায়ক হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button