বানিজ্য

আদানির কাছে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ চেয়েছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার ভারতের আদানি গ্রুপের কাছে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যা

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সকে বলেন, “গত মাসেরও বেশি সময় ধরে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এ জন্য আমরা তাদের কাছে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানাচ্ছি।”

চুক্তির পটভূমি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি করেন। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে আদানি পাওয়ার। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আদানি পাওয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বকেয়া বিল এবং শীতকালে বিদ্যুৎ চাহিদা কম থাকার কারণে তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়েছে।

প্রযুক্তিগত সমস্যা

বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম আরও জানান, “আদানি তাদের দ্বিতীয় ইউনিটটি পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করেছিল, তবে প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যার কারণে ইউনিটটি চালু করা যায়নি।”

বকেয়া বিলের বিষয়

বিপিডিবি প্রতি মাসে আদানি পাওয়ারকে ৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছে এবং বকেয়া কমানোর চেষ্টা করছে। গত ডিসেম্বরে আদানি জানিয়েছিল, বিপিডিবির কাছে তাদের ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে। তবে বিপিডিবির চেয়ারম্যান বলেছিলেন, আদানির কাছে বকেয়া বিলের পরিমাণ ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো।

চুক্তির বিতর্ক

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই চুক্তি নিয়ে বিতর্ক ওঠে। বিশ্লেষকদের মতে, চুক্তিতে যেভাবে মূল্য নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হয় দুটি সূচকের গড়ের ভিত্তিতে, যা অন্যান্য ভারতীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের তুলনায় বাংলাদেশকে ৫৫ শতাংশ বেশি দাম পরিশোধ করতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন

বাংলাদেশ সরকার আদানির সঙ্গে চুক্তির শর্ত পর্যালোচনা করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। চলতি মাসেই কমিটিটির প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে চুক্তির শর্ত পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া

২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতায় বসার পর অন্তবর্তী সরকার আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। তাদের দাবি, আদানি তাদের ঝাড়খণ্ড প্রকল্পের জন্য ভারতের কাছ থেকে কর-সুবিধা পেলেও তা বাংলাদেশকে স্থানান্তর করেনি।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রেও ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে আদানি। গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরেরা আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানিসহ সাতজন নির্বাহীকে ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। আদানি গ্রুপ অবশ্য এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি নিয়ে চলমান বিতর্ক এবং বকেয়া বিলের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। আশা করা যায়, সরকার এবং আদানি গ্রুপের মধ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে এবং দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যা সমাধান হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button