বানিজ্য

দেশের বাজারে সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে

দেশের বাজারে সোনার দাম লাফিয়ে বাড়ছে। নতুন দামের ফলে এখন প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১২ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ প্রতি ভরি সোনার দাম দেড় লাখ টাকা ছুঁতে আর মাত্র ১৮৮ টাকা বাকি। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আজ সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারেও সমন্বয় করা হয়েছে।

ফের বেড়েছে সোনার দাম

চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে এ নিয়ে তৃতীয়বার সোনার মূল্যবৃদ্ধি করা হলো। সর্বশেষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতি ভরিতে ২ হাজার ৯২৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এবার নতুন করে প্রতি ভরিতে আরও ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বাড়ানো হলো। ফলে হলমার্কযুক্ত ২২ ক্যারেট সোনার ভরির দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১২ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৪৩ হাজার ১ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭৭ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম হয়েছে ১ লাখ ৯১৭ টাকা।

গতকাল পর্যন্ত ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৮ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ২০ হাজার ৯৪৪ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনা ৯৯ হাজার ৫২৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগামীকাল থেকে কার্যকর হওয়া নতুন মূল্যের ফলে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ৯৯৪ টাকা, ২১ ক্যারেটে ১ হাজার ৯০২ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ১ হাজার ৬৩৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনায় ১ হাজার ৩৮৮ টাকা।

বিশ্ববাজারে সোনার দাম রেকর্ড পর্যায়ে

বিশ্ববাজারে সোনার দামও বর্তমানে সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৯০৩ মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকেই বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার কারণে সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী।

বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা অনিশ্চয়তা, ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার মানের ওঠানামা, মুদ্রাস্ফীতি এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলে বিশ্ববাজারে এর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার প্রভাব বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পড়ছে।

সোনার দাম বৃদ্ধির কারণ কী?

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) মতে, মূলত কয়েকটি কারণ সোনার দাম বাড়ার জন্য দায়ী—

  1. আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব – বিশ্ববাজারে সোনার দর বাড়লে সেটির সরাসরি প্রভাব স্থানীয় বাজারেও পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বেশি থাকলে বাংলাদেশেও সোনার দাম বেড়ে যায়।
  2. টাকার মূল্যহ্রাস – ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে গেলে সোনার আমদানি খরচ বেড়ে যায়, যা স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
  3. সরবরাহ সংকট – বিশ্বব্যাপী সোনার সরবরাহ কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়ে।
  4. বিনিয়োগ চাহিদা বৃদ্ধি – সাধারণত অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে ঝোঁকেন। এতে বাজারে চাহিদা বেড়ে যায় এবং দামও বৃদ্ধি পায়।

সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

সোনার দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে সাধারণ ক্রেতারা বেশ হতাশ। বিয়ে, উৎসব বা বিশেষ উপলক্ষে সোনার গয়না কেনার পরিকল্পনা করা অনেকেই এখন বাজেট নিয়ে ভাবছেন। অন্যদিকে, গহনা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিক্রি কিছুটা কমলেও বিনিয়োগকারীদের কারণে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।

বনানীর এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, “গত কয়েক মাসে গয়নার বিক্রি কমেছে, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা বেশি পরিমাণ সোনা কিনছেন। এতে বাজারে একটা ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে।”

অন্যদিকে, এক ক্রেতা জানান, “বছর দুয়েক আগেও ২২ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ৯০-৯৫ হাজার টাকা। এখন প্রায় দেড় লাখ ছুঁইছুঁই করছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জন্য সোনা কেনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”

সোনার ভবিষ্যৎ বাজার কেমন হবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে যদি অনিশ্চয়তা চলতে থাকে, তাহলে সোনার দর আরও বাড়তে পারে। তবে কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে পারে, যার ফলে মূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।

বাংলাদেশে আমদানি নির্ভরতার কারণে স্থানীয় বাজারের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। তাই যদি বিশ্ববাজারে সোনার দাম আরও বাড়ে, তাহলে বাংলাদেশেও নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

উপসংহার

সোনার দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। অন্যদিকে, বিনিয়োগকারীরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশি পরিমাণ সোনা কিনছেন। বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়তে পারে বা স্থিতিশীল হতে পারে।

বাংলাদেশের বাজারে সোনার দামের ওঠানামা নজরদারি করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়কে প্রভাবিত করে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button