চট্টগ্রাম ইপিজেডে দুই কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেডের শ্রমিকদের মধ্যে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। খাদ্য ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আজ সোমবার সকালে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।
বিক্ষোভের কারণ
গতকাল রোববারও একই দাবিতে প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেডের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছিলেন। এরপর কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই কারখানার দুটি ইউনিট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয় এবং তারা আবারও কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন।
পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
বিক্ষোভের সময় প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলসের শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা তাদের বাধা দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা শুরু হয়। এ সময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, প্যাসিফিক গ্রুপের কারখানাগুলোতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের পটভূমি
প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেড প্যাসিফিক নিট ডিভিশনের আওতাধীন, আর এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেড প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের আওতাধীন। উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ব্যবসায়ী মো. নাছির উদ্দিন। বর্তমানে প্যাসিফিক জিন্সের দায়িত্বে আছেন তাঁর ছেলে সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, এবং প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তাহমীর।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হন। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল খাদ্য ভাতা, চিকিৎসা ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধার দাবিতে তারা বিক্ষোভ করেন। কিছু কর্মকর্তা এসে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু শ্রমিকরা তখনই তাঁদের ওপর চড়াও হন।
কারখানা বন্ধের ঘোষণা
রাতের দিকে কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শ্রমিকদের অবৈধভাবে কাজ বন্ধ রাখা এবং অন্যায় দাবিদাওয়া উত্থাপন করার কারণে ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ ধারা ১২(১) অনুযায়ী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতির অবনতি
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার সামনে অন্তত চারশ শ্রমিক দুই পক্ষে ভাগ হয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের হাতে ইট-পাটকেল ও লাঠিসোঁটা ছিল। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
চট্টগ্রামের ইপিজেডে শ্রমিকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।