বাংলাদেশ

সাত কলেজের অধ্যাদেশ চূড়ান্তের কাজ শেষ পর্যায়ে

Advertisement

রাজধানীর সাত কলেজকে নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সাতটি সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতির কথা জানিয়েছে। সোমবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা খালিদ মাহমুদের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর খসড়া পরিমার্জন ও চূড়ান্তকরণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে পাওয়া পাঁচ হাজারের বেশি মতামত আইনগত ও বাস্তবতার আলোকে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় আশা করছে, আসন্ন শীতকালীন ছুটি শেষে আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে।

অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণের অগ্রগতি

প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ অধ্যাদেশ জারির দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশের আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে।

খসড়া পরিমার্জন: মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর খসড়া পরিমার্জন ও চূড়ান্তকরণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

মতামত পর্যালোচনা: খসড়ার বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন মহল থেকে পাঁচ হাজারের বেশি মতামত পাওয়া গেছে। এই প্রাপ্ত প্রতিটি মতামত আইন ও বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনা করে খসড়া পরিমার্জন করা হচ্ছে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা: আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিমার্জিত খসড়ার ওপর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত সংগ্রহের কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় আশা করছে, এই সভা সম্পন্ন হওয়ার পরই অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণের কাজ সমাপ্ত হবে।

প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরুর তারিখ

অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণের সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা যেন বিঘ্নিত না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষাবর্ষ: ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে তিন ইউনিটে মোট ৯ হাজার ৩৮৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চয়ন সম্পন্ন করেছেন।

ক্লাস শুরুর নির্দেশনা: ভর্তি বিজ্ঞপ্তির আলোকে বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামোতে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর জন্য স্ব স্ব কলেজের শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্ভাব্য তারিখ: শীতকালীন ছুটি শেষে ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে বলে শিক্ষক প্রতিনিধিগণ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

অপারেশন ম্যানুয়েল: অন্তর্বর্তী প্রশাসন পরিচালনা এবং নবীন শিক্ষার্থীদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন ও পাঠদানের জন্য একটি অপারেশন ম্যানুয়েলও ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বিতর্ক ও শিক্ষকদের আপত্তি

প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্ত অবস্থান বিদ্যমান। বিশেষ করে খসড়া অধ্যাদেশে প্রস্তাবিত স্কুলিং কাঠামো নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আপত্তি রয়েছে।

স্কুলিং কাঠামো: খসড়া অধ্যাদেশে সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি’ বা ‘স্কুলিং’ কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষকদের উদ্বেগ: সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, স্কুলিং কাঠামোতে তাঁদের পদোন্নতির মতো মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে।

বিকল্প দাবি: তাঁরা কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ‘অধিভুক্তিমূলক কাঠামোতে’ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের অবস্থান: বর্তমান শিক্ষার্থীদের একাংশ দ্রুত অধ্যাদেশ জারির পক্ষে, তবে আরেক অংশ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতই স্কুলিং কাঠামোর বিরোধিতা করে বলছে, এতে কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকবে না।

মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য রক্ষা, নারী শিক্ষার সুযোগ সংকোচন না করা, সম্পত্তির মালিকানা সংরক্ষণ ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না করার বিষয়গুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছে।

দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা ও হুঁশিয়ারি

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই স্পর্শকাতর সময়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেছে।

গুজব প্রতিরোধ: মন্ত্রণালয় জানায়, গুজব বা অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ও সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

পেশাদারিত্ব: মন্ত্রণালয় আশা করছে, স্কুলিং কাঠামোর বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামা শিক্ষকরা ‘সরকারি কর্মচারী হিসাবে পেশাদ্বারিত্ব বজায় রাখবেন’

শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সাত কলেজ পরিচিতি

যে সাতটি কলেজকে নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের কার্যক্রম চলছে, সেগুলো হলো:

১. ঢাকা কলেজ ২. ইডেন মহিলা কলেজ ৩. সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ৪. কবি নজরুল সরকারি কলেজ ৫. বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ৬. মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ৭. সরকারি তিতুমীর কলেজ

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রূপরেখা

সাত কলেজের অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকার সরকারি ঘোষণা এবং ১ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরুর আশাবাদ দেশের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও প্রস্তাবিত স্কুলিং কাঠামো নিয়ে শিক্ষকদের আপত্তি ও বিতর্ক রয়েছে, তবে মন্ত্রণালয় সব পক্ষ থেকে পাওয়া মতামত বিবেচনা করে অধ্যাদেশটিকে চূড়ান্ত করছে। অধ্যাদেশটি চূড়ান্তভাবে জারি হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাত কলেজের ভবিষ্যৎ রূপরেখা স্পষ্ট হবে।

এম আর এম – ২৫৫৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button