জাপানের পূর্ব আওমোরি উপকূলের কাছে ৭.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় রাত প্রায় ১১টা ১৫ মিনিটে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের পরপরই আওমোরি, ইওয়াতে ও হোক্কাইডোর উপকূলীয় এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ)। জাপানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই অঞ্চলে সুনামির ঢেউয়ের উচ্চতা ৩ মিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এইসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের দ্রুত উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিং অব ফায়ারের দেশ হিসেবে পরিচিত জাপানে এই শক্তিশালী ভূমিকম্পটি বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
ভূমিকম্পের তীব্রতা ও উৎপত্তিস্থল
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) ভূমিকম্পটির তীব্রতা ও উৎপত্তি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। জাপানের আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল আনুমানিক ৭.৬ ম্যাগনিটিউড। এটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকম্প।
উৎপত্তিস্থল: ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল উপকূল থেকে দূরে, প্রায় ৫০ কিলোমিটার গভীরে। গভীরতা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এর প্রভাব স্থলভাগে কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে সমুদ্রপৃষ্ঠে এটি সুনামি সৃষ্টি করতে পারে।
তীব্রতার রেকর্ড: জেএমএ জানিয়েছে, আওমোরির হাচিনোহে শহরে জাপানি ভূমিকম্পমাত্রা স্কেলে আপার-৬ (৬+) তীব্রতা রেকর্ড করা হয়েছে। জাপানি স্কেলে আপার-৬ তীব্রতা মানে ভবন এবং অবকাঠামোর গুরুতর ক্ষতি হতে পারে।
এই শক্তিশালী ভূমিকম্প জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকাগুলোতে তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে।
সুনামি সতর্কতা জারি ও ঝুঁকির এলাকা
ভূমিকম্পের পরপরই জাপান সরকার আওমোরি উপকূলের পাশাপাশি আরও দুটি অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করেছে।
সতর্কতা জারি: আওমোরি, ইওয়াতে ও হোক্কাইডোর উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সম্ভাব্য উচ্চতা: জাপানি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, সুনামির ঢেউয়ের উচ্চতা ৩ মিটার (প্রায় ১০ ফুট) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্দেশনা: এসব উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের কোনো রকম দেরি না করে দ্রুত উঁচু স্থানে বা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে উপকূলে না যেতে এবং সমুদ্রের কাছাকাছি কোনো স্থাপনায় না থাকার জন্য সতর্ক করেছে।
জাপান সরকার সুনামির ঝুঁকি মোকাবিলায় জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা সক্রিয় করেছে।
জাপানের ভূ-প্রকৃতি: রিং অব ফায়ার
জাপান বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ, যা ‘রিং অব ফায়ার’ নামে পরিচিত সক্রিয় ভূমিকম্প বলয়ের ওপরে অবস্থিত।
ভূমিকম্পের প্রবণতা: প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট এবং অন্যান্য টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় জাপানে ঘন ঘন শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।
পূর্বের বিপর্যয়: এর আগে ২০১১ সালের তোহোকু ভূমিকম্প এবং সুনামির মতো ভয়াবহ দুর্যোগ জাপান দেখেছিল, যা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল।
এই ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা জাপানকে ভূমিকম্প ও সুনামির মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যতম উন্নত প্রযুক্তি এবং প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করেছে।
প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা
যদিও এই ভূমিকম্পের পরপরই কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি, তবে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প এবং ৩ মিটার সুনামির আশঙ্কা থাকায় স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
অবকাঠামোগত ঝুঁকি: আওমোরি, ইওয়াতে ও হোক্কাইডোর উপকূলীয় অঞ্চলে থাকা ভবন এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা: স্থানীয় প্রশাসন ও জরুরি সেবা দলগুলো উপকূলীয় এলাকায় টহল দিচ্ছে এবং মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ করছে। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে কিনা, সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি
জাপানের পূর্ব আওমোরি উপকূলে ৭.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সুনামি সতর্কতা জারির ঘটনাটি আবারও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতাকে তুলে ধরল। জাপান সরকার দ্রুত সুনামি সতর্কতা জারি করে উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছে, তা জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং যেকোনো ধরনের জরুরি সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
এম আর এম – ২৫৫৬, Signalbd.com



