আঞ্চলিক

জুলাই শহীদ কমর উদ্দিনের বাড়িতে হামলা

Advertisement

বগুড়ায় ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে’ গুলিতে প্রাণ হারানো রিকশাচালক শহীদ কমর উদ্দিন বাঙ্গির পরিবারের ওপর সংঘবদ্ধ হামলার অভিযোগ উঠেছে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ৮টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার চক আকাশতারা খাঁপাড়া এলাকায় এই বর্বর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় শহীদ কমর উদ্দিনের নাতি শিমুলসহ তিনজন আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় শিমুলকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীরা শহীদ কমর উদ্দিনের আধাপাকা বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে পরিবার অভিযোগ করেছে। শহীদ পরিবারটির ওপর এমন বর্বরোচিত হামলা জুলাই বিপ্লবের চেতনার প্রতি অবমাননা এবং স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

হামলার বিবরণ: ব্যাডমিন্টন খেলা থেকে সহিংসতা

স্থানীয় সূত্র ও থানায় দায়ের করা অভিযোগ অনুযায়ী, হামলার সময় শহীদ কমর উদ্দিন বাঙ্গির নাতি শিমুল বাড়ির সামনে ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন।

আচমকা আক্রমণ: শিমুল ব্যাডমিন্টন খেলার সময় হঠাৎ করেই ৭-৮ জন অজ্ঞাতনামা যুবক তাঁকে ঘিরে ফেলে।

ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার: হামলাকারীরা আচমকা শিমুলকে ধারালো রামদা দিয়ে আঘাত করে। রামদার আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বাধা দেওয়ায় মারধর: হামলাকারীরা শুধু শিমুলকেই আঘাত করেই থামেনি, তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা দুইজন স্থানীয় বাসিন্দাকেও তারা মারধর করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই ঘটনায় শিমুলকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যা এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

শহীদ পরিবারের বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট

আহত করার পর হামলাকারীরা শহীদ কমর উদ্দিনের বসতবাড়িতেও হামলা চালায়।

ক্ষয়ক্ষতি: হামলাকারীরা শহীদ কমর উদ্দিনের আধাপাকা বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি, মোটরসাইকেল ও অন্যান্য মূল্যবান মালামাল ভাঙচুর করে লন্ডভন্ড করে দেয়।

লুটপাট: শহীদ কমর উদ্দিনের মা জমেলা বেগম জানান, হামলাকারীরা তাঁকেও মারধর করে এবং বাড়িতে থাকা টাকা-পয়সাও লুট করে নিয়ে যায়

হামলাকারীদের পরিচয়: জমেলা বেগম অভিযোগে নারুলী তালপট্টি এলাকার ইমরান হোসেন (২১), ইমন (২০), সোহান (২৭), রাকিবুল (২১), ইমরান (২০)-সহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই হামলা চালানো হয়েছে।

শহীদ কমর উদ্দিন বাঙ্গি ছিলেন একজন নিরীহ রিকশাচালক, যিনি গত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে গুলিতে প্রাণ হারান। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে পরিবারটি চরম কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

কমর উদ্দিনের মৃত্যুতে তাঁর পরিবার সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ে। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা এই মানুষটির মৃত্যুতে পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে

শহীদ কমর উদ্দিনের মা জমেলা বেগম ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন:

“আমার ছেলে দেশের জন্য জীবন দিল, আর আজ আমাদের বাড়িতেই হামলা। আমরা কি একটু শান্তিতে থাকতে পারব না?”

পরিবারের এক স্বজন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করি।” এই বর্বর হামলা পুরো পরিবারকে আবারও গভীর আতঙ্কে ডুবিয়েছে।

প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও তদন্ত

শহীদ পরিবারের ওপর হামলার বিষয়টি জানার পর স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।

অফিসার ইনচার্জের বক্তব্য: বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মাহফুজ আলম বলেন, “শহীদ পরিবারের ওপর হামলার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। দোষীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মামলার প্রক্রিয়া: থানায় এ বিষয়ে ইতোমধ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং পুলিশ হামলাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থান এই ধরনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক হামলা রোধে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

জুলাই বিপ্লবের চেতনার প্রতি অবমাননা

বগুড়ায় ‘জুলাই শহীদ’ কমর উদ্দিনের বাড়িতে সংঘবদ্ধ হামলা, নাতি শিমুলকে ধারালো রামদা দিয়ে আঘাত এবং বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। যে পরিবার দেশের জন্য তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, সেই পরিবারের ওপর এমন বর্বর হামলা জুলাই বিপ্লবের চেতনার প্রতি চরম অবমাননা। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলেও স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিহিংসা ও সন্ত্রাস এখনও বিদ্যমান। প্রশাসনকে দ্রুত এই হামলার পেছনে থাকা মূল হোতা এবং তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এম আর এম – ২৫৫৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button