রাজনীতি

বিএনপির ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ নিয়ে যা জানালেন তারেক রহমান

Advertisement

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে দেশের আইনশৃঙ্খলা, আদালত, প্রশাসনসহ প্রত্যেকটা জিনিসকে ভেঙেচুরে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎও নষ্ট হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ‘বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর কেআইবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সমাপনী সেশনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি খাল খনন কর্মসূচি পুনরায় শুরু করা, প্রবাসীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং পেপালসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশে নিয়ে আসার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড একমাত্র দেশের সাধারণ মানুষ।”

বিগত সরকারের সমালোচনা ও ধ্বংসের চিত্র

তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে বিগত সরকারের কঠোর সমালোচনা করে দেশের অঙ্গীকারগুলোর অপব্যবহারের বিষয়টি তুলে ধরেন।

প্রতিটি ক্ষেত্রে অরাজকতা: তিনি অভিযোগ করেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা, আদালত, প্রশাসনসহ প্রত্যেকটা জিনিসকে ভেঙেচুরে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। “প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন অরাজকতা বিরাজ করছে।”

ক্ষমতার অপব্যবহার: তিনি বলেন, বিগত সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের অর্গানগুলোকে ব্যবহার করেছিল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য।

ভবিষ্যৎ নষ্ট: এই অরাজকতার ফলে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎও নষ্ট হয়েছে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, এই অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই, নেই এবং নেই।

খাল খনন প্রকল্প: খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার অঙ্গীকার

তারেক রহমান বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনার একটি প্রধান অংশ হিসেবে খাল খনন কর্মসূচি পুনরায় শুরু করার কথা জানান। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নীতি অনুসরণ করা হবে।

জিয়াউর রহমানের সফলতা: শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তখন তিনি খাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করেন। খাল খননের মাধ্যমে তিনি একদিকে যেমন বন্যা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, অন্যদিকে তেমনি ফসলের সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছিলেন।

ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি: এর ফলে যে জমিতে একটি ফসল হতো, সেখানে দুটি ফসল হওয়া শুরু করলো। যেখানে দু’টি হতো, সেখানে তিনটি ফসল হওয়া শুরু করলো, শুধু সেচ সুবিধা পাওয়ার জন্য। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিল এবং অল্প পরিমাণ হলেও বিদেশে রফতানি করতে সক্ষম হয়েছিল।

বিএনপির অঙ্গীকার: তিনি বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে আবার দেশ পরিচালনার সুযোগ দিলে খাল খননের কাজ আবার শুরু করা হবে।”

জনশক্তি রফতানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি

তারেক রহমান বিদেশে থাকা প্রায় দেড় কোটি প্রবাসীর কথা তুলে ধরে তাঁদেরকে সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা দেন।

জিয়াউর রহমানের উদ্যোগ: তিনি বলেন, এই যে জনশক্তি রফতানি, এর উপায় প্রথম বের করেছিলেন জিয়াউর রহমান, যখন তিনি দেশ পরিচালনা করছিলেন।

ভ্যালু অ্যাড করা: বিএনপি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যে, অদক্ষ মানুষগুলোকে যদি সঠিকভাবে ট্রেনিং দেওয়া যায় তা দেশের অনেক কাজে লাগবে।

বেতন বৃদ্ধি: তিনি বলেন, “যেই ৮ থেকে ১০ লক্ষ অদক্ষ মানুষ বিদেশে যাচ্ছে তাদেরকে আমরা ভ্যালু এড করে, ১৫ থেকে ২০ লক্ষ করতে চাই।” তিনি উদাহরণ দেন, এখন যদি তাদের একটি ভাষার কোর্স করানো হয় বা ট্রেনিং দেওয়া হয়, তাহলে যেখানে তারা ১০০ ডলারের বেতন পায়, সেটা বেড়ে ৩০০ ডলার হয়ে যাবে। আর এতে দেশের রেমিট্যান্সের পরিমাণও বেড়ে যাবে

ডিজিটাল অর্থনীতি ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য পরিকল্পনা

তারেক রহমান দেশের তরুণ কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ফ্রিল্যান্সিং এবং ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা জানান।

পেপাল ও ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স: তিনি বলেন, পেপালের সাথে কথা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে একটি টিমের সাথে আলোচনা হয়েছে।

আয় বৃদ্ধি: তিনি মনে করেন, অনেক তরুণ আছে যারা বিভিন্ন কন্টেন্ট তৈরি করে, কিন্তু সঠিক প্ল্যাটফর্মে তা দিতে পারছে না। রাষ্ট্রীয় পলিসি করে যদি পেপাল, গুগল, মেটাসহ ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস এখানে নিয়ে আসা যায়, তাহলে এই কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ইনকাম অনেক বেড়ে যাবে।

গণতন্ত্র ও গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড

তারেক রহমান স্বৈরাচার বিতাড়িত করার গণঅভ্যুত্থানকে দেশের সাধারণ মানুষের আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

মাস্টারমাইন্ড: তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড একমাত্র দেশের সাধারণ মানুষ।” তিনি এই আন্দোলনের কৃতিত্ব দেন একজন গৃহবধূ, ক্ষুদ্র মুদির দোকানদার, শিক্ষক, রিকশাচালক, ছাত্র-জনতা, এমনকি ছোট ছোট শিশুদের। ৬৩ জন শিশু সেই আন্দোলনে মারা গিয়েছিল।

উদ্দেশ্য: এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল একটাই—তা হলো দেশে একটি জবাবদিহিতার সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। তিনি মনে করেন, একমাত্র গণতন্ত্রই সমাজে, দেশে এবং রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে।

জনগণের অংশগ্রহণ ও আশু নির্বাচন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ অনুষ্ঠানে খাল খনন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে পরিবর্তনের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা জনগণের সামনে দলের ভবিষ্যৎ এজেন্ডা তুলে ধরেছে। তিনি ছাত্রদল নেতাকর্মীদের প্রতি লিফলেট নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণের কাছে পরিকল্পনা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া আমরা পারব না। এই বার্তাটি আসন্ন নির্বাচনের আগে বিএনপিকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এম আর এম – ২৫৫৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button