নরসিংদীর মনোহরদীতে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে নামাজের প্রতি আগ্রহ এবং ধৈর্য গড়ে তুলতে আল-ইহদা ফাউন্ডেশন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগে টানা ৪০ দিন মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায়কারী ৩৭ জন শিশু-কিশোরকে বিশেষ পুরস্কার হিসেবে একটি করে সাইকেল প্রদান করা হয়েছে।
উদ্যোগটি কেবল শিশুদের নামাজে উৎসাহিত করাই নয়, পাশাপাশি তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলার জন্যও পরিকল্পিত।
শিশু-বান্ধব মসজিদ: নামাজে আগ্রহী নতুন প্রজন্ম গড়ার অঙ্গীকার
মনোহরদী উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে টানা ৪০ দিন জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায়কারী শিশু-কিশোররা এই ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছে। ফাউন্ডেশন আশা করছে, এই ধরনের উদ্যোগ মসজিদগুলোকে শিশুবান্ধব করে তুলবে এবং নামাজের প্রতি শিশুদের আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাবে।
শুকুন্দী ইউনিয়নের সাভারদিয়া ঈদগাহ মাঠে গত ৬ ডিসেম্বর বিকেলে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনোহরদী উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান সজিব।
উপস্থিত বক্তারা এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, “এ ধরনের সৃজনশীল এবং প্রেরণামূলক উদ্যোগ শিশু-কিশোরদের মধ্যে ধর্মীয় সচেতনতা এবং নামাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। পাশাপাশি, এটি কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
শিশু-কিশোরদের অনুভূতি: উৎসাহ এবং প্রেরণার গল্প
পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশু-কিশোররা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে জানান, এই ধরনের আয়োজন তাদের নিয়মিতভাবে জামাতে নামাজ আদায়ে আরও উৎসাহিত করেছে। অনেকে বলেন, “আমরা প্রতিদিন ফজরের নামাজ মসজিদে পড়ার মাধ্যমে একটি নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে পেরেছি। সাইকেল উপহারটি আমাদের জন্য বড় প্রেরণা।”
এছাড়াও তারা আশা প্রকাশ করেছে, ভবিষ্যতে আরও বেশি শিশু এই ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে।
নামাজে শিশুদের আগ্রহ বৃদ্ধি: সামাজিক ও নৈতিক প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু-কিশোরদের মধ্যে নামাজের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেলে তা শুধুমাত্র ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নয়, ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
- নৈতিক শিক্ষার প্রসার: শিশু-কিশোররা নিয়মিত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ধৈর্য, সততা এবং অন্যের প্রতি সহানুভূতির মতো গুণাবলী অর্জন করে।
- অপরাধ প্রতিরোধ: ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা শিশুদের সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সাহায্য করে, যা কিশোর অপরাধের ঝুঁকি কমায়।
- সামাজিক সংযোগ: মসজিদে জামাতে অংশ নেওয়া শিশুদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
মসজিদগুলোকে শিশু-বান্ধব করার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধ একসঙ্গে বিকশিত করা সম্ভব।
আল-ইহদা ফাউন্ডেশন: নতুন প্রজন্মের জন্য উদ্ভাবনী উদ্যোগ
আল-ইহদা ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে শিশু-কিশোরদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ফাউন্ডেশনের পরিচালক জানান, “আমরা চাই আমাদের ছোট্ট প্রজন্ম কেবল নামাজ শিখুক না, বরং সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের সাথেও পরিচিত হোক। তাই এই ধরনের উৎসাহমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।”
ফাউন্ডেশনের অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে:
- মসজিদে শিক্ষামূলক ক্লাস
- শিশুদের জন্য কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম
- কমিউনিটি সচেতনতা ও পরিবেশগত শিক্ষামূলক কার্যক্রম
এ ধরনের উদ্যোগ স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য নতুন উদ্দীপনা এবং সামাজিক সংহতি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্থানীয়রা মন্তব্য করছেন: প্রশংসা ও অনুপ্রেরণা
স্থানীয়রা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। একজন অভিভাবক বলেন, “আমরা চাই আমাদের শিশুরা শুধুমাত্র আধুনিক শিক্ষায় না, বরং ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষায়ও এগিয়ে থাকুক। এই ধরনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।”
অন্য এক স্থানীয় যোগ করেন, “সাইকেল উপহারটি শিশুদের জন্য কেবল পুরস্কার নয়, বরং এটি তাদের নামাজে আগ্রহ বাড়ানোর একটি অনুপ্রেরণা। এটি আমাদের এলাকার শিশুদের মধ্যে একটি ইতিবাচক উদাহরণ তৈরি করবে।”
পরবর্তী পরিকল্পনা: আরও শিশু-বান্ধব উদ্যোগ
ফাউন্ডেশন জানিয়েছে যে, ভবিষ্যতে তারা আরও বেশি শিশু-কিশোরকে মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়ার প্রতি উৎসাহিত করতে নতুন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এই কার্যক্রমে শিক্ষামূলক গেম, পুরস্কার বিতরণ, এবং কমিউনিটি সচেতনতা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ফাউন্ডেশন আরও উল্লেখ করেছে, “আমাদের লক্ষ্য শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নয়, বরং শিশুদের মধ্যে সামাজিক দক্ষতা, সহমর্মিতা, এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ ঘটানো। মসজিদকে শিশুদের জন্য নিরাপদ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে পরিণত করা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।”
নরসিংদীর মনোহরদীতে আল-ইহদা ফাউন্ডেশনের এই উদ্ভাবনী উদ্যোগ কেবল ৩৭ জন শিশু-কিশোরকে পুরস্কৃত করাই নয়, বরং এটি সমগ্র এলাকার শিশুদের জন্য নামাজে আগ্রহ এবং নৈতিক শিক্ষার নতুন দিশা দেখিয়েছে।
এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের সমাজে ধর্মীয় সচেতনতা, সামাজিক মূল্যবোধ এবং কিশোর অপরাধ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নিশ্চয়ই, ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি এই ধরনের সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমাদের সমাজে শিশু-কিশোরদের নৈতিক ও সামাজিক বিকাশের সম্ভাবনা আরও প্রসারিত হবে।
MAH – 14191 I Signalbd.com



