পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে প্রস্তাবিত ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণকে ঘিরে বিপুল অনুদান আসছে, যার ফলে তৈরি হয়েছে নগদ অর্থের (রুপি) পাহাড়! ট্রাঙ্ক ভর্তি এই নগদ অর্থ এনে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বাড়িতে ঢালা হচ্ছে এবং তা গোনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৩০ জন কর্মীকে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে সিসিটিভির কড়া নজরদারিতে, যেখানে নগদ অর্থ গোনার জন্য আধুনিক মেশিনও ব্যবহার করা হচ্ছে। রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া গণনা প্রক্রিয়া সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত ৭টি ট্রাঙ্ক খোলা হয়েছে, সেখান থেকে ৩৭ লাখ রুপি সংগ্রহ হয়েছে। এর পাশাপাশি অনলাইনেও ৯৩ লাখ রুপি জমা হয়েছে। এই বিপুল অনুদান প্রমাণ করে যে, বাবরি মসজিদের নামাঙ্কিত এই উদ্যোগ স্থানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন ও সমর্থন সৃষ্টি করেছে।
নগদ অনুদানের বহর ও গণনা প্রক্রিয়া
মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে হুমায়ুন কবীরের বাড়িতে বাবরি মসজিদের জন্য আসা নগদ অর্থের পরিমাণ রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। মসজিদ নির্মাণের জন্য মোট ১১টি ট্রাঙ্ক ভর্তি নগদ রুপি অনুদান হিসেবে এসেছে। এই বিপুল অর্থ গোনার জন্য ৩০ জন কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে আলেম-ওলামাদের উপস্থিতিতে গণনা শুরু হয় এবং সোমবার সকাল পর্যন্ত ৭টি ট্রাঙ্ক খোলা হয়েছে। এই ৭টি ট্রাঙ্ক থেকে এখন পর্যন্ত ৩৭ লাখ রুপি সংগ্রহ হয়েছে।
তত্ত্বাবধান: এই বিশাল কর্মযজ্ঞ এবং অর্থ গণনার কাজ চলছে সিসিটিভির কড়া নজরদারিতে এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ ইসলামিক ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’র আলেম-ওলামারা এর দায়িত্বে রয়েছেন।
হুমায়ুন কবীর দাবি করেছেন, শুধুমাত্র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন কিউআর কোড স্ক্যান করেই তাঁর ব্যাংকে ৯৩ লাখ টাকা জমা পড়েছে। সব মিলিয়ে প্রথম দুই দিনেই নগদ ও অনলাইন মিলিয়ে মসজিদ নির্মানের জন্য মোট ১ কোটি ৩০ লাখ রুপির বেশি দান পাওয়া গেছে।
৩০০ কোটি টাকার বাজেট ও জনপ্রিয়তার প্রমাণ
হুমায়ুন কবীর ৬ ডিসেম্বর (শনিবার) বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন ঘোষণা করেছিলেন যে, এই মসজিদ নির্মাণ করতে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা খরচ হবে। তাঁর এই ঘোষণা অনেকেই অসম্ভব বলে উড়িয়ে দিলেও, অনুদানের বহর দেখে সেই ধারণা কিছুটা হলেও পরিবর্তিত হয়েছে।
বিশাল বাজেট: ৩ কোটি রুপির বাজেটটি মসজিদ, হাসপাতাল, কলেজ ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের জন্য।
একক অনুদান: হুমায়ুন কবীর আরও জানান, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তিই বাবরি মসজিদ তৈরির জন্য ৮০ কোটি টাকা অনুদান দেবেন বলে জানিয়েছেন।
জনপ্রিয়তা: হুমায়ুনের মতে, এই বিপুল অনুদান থেকেই বোঝা যায়, বাবরি মসজিদ তৈরির আগেই তিনি কতটা জনপ্রিয় এবং এই উদ্যোগের প্রতি মানুষের কতটা সমর্থন রয়েছে।
নগদ অর্থ ছাড়াও সাধারণ মানুষ মসজিদ নির্মাণের জন্য ইট আর বালুও দান করছেন। স্থানীয়দের তথ্য মতে, ইতিমধ্যে কয়েক লাখ ইট এবং কয়েক হাজার বালুর বস্তা মসজিদ নির্মানের জমিতে এসে পৌঁছেছে।
মসজিদ প্রকল্পের পরিধি ও অন্যান্য স্থাপনা
হুমায়ুন কবীর শুধু একটি মসজিদ নির্মাণ করছেন না, বরং এটি একটি বৃহৎ কমপ্লেক্স হিসেবে তৈরি হচ্ছে।
জমির পরিমাণ: ২৫ বিঘা জমিতে মসজিদ চত্বরে নির্মাণ হবে কলেজ ও হাসপাতাল। মূল মসজিদ নির্মাণ হবে তিন কাঠা জমির ওপর। মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি হাসপাতাল, গেস্টহাউস এবং সভাকক্ষও থাকবে।
হুমায়ুন কবির এই প্রকল্পের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “এটি মুসলমানদের প্রতিশ্রুতি: বাবরি মসজিদ তৈরি হবেই, হবেই, হবেই।”
রাজনৈতিক ও আইনি বিতর্ক
বাবরি মসজিদের নামকরণের পর থেকেই এই উদ্যোগটি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই নামকরণে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন।
আইনি সুরক্ষা: মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী বলে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এ ক্ষেত্রে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। আদালত বলেছে, ভারতের সংবিধানে লেখা আছে—কেউ চাইলে মসজিদ তৈরি করতে পারে; এটি তার অধিকার।
তৃণমূলের সাসপেনশন: তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাসপেন্ড হওয়া হুমায়ুন কবীর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও প্রকাশ্যে আক্রমণ চালিয়েছেন। তিনি ২২ ডিসেম্বর নতুন দল গড়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এবং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ১৩৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন।
হুমায়ুন কবীর দাবি করেন, মুর্শিদাবাদের সঙ্গে বীরভূম ও মালদহ থেকেও বাবরি মসজিদ তৈরির প্রস্তাব এসেছে এবং তিনি সেই প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাসও দেন।
জনগণের আবেগের প্রতিচ্ছবি
মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদের জন্য ট্রাঙ্ক ভর্তি নগদ অনুদান আসা এবং তা গোনার জন্য আধুনিক মেশিন ব্যবহার করা—এই দৃশ্যটি এই উদ্যোগের প্রতি স্থানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর গভীর সমর্থন ও আবেগকে তুলে ধরে। সরকারি অনুমোদন ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ প্রমাণ করে যে, অযোধ্যার ঐতিহাসিক আঘাতের স্মৃতি আজও মানুষের মনে বিদ্যমান। এই বিপুল অর্থ এবং জনগণের সমর্থন হুমায়ুন কবীরকে তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে বড় ধরনের সহায়তা করবে।
এম আর এম – ২৫৪৩, Signalbd.com



