বিশ্ব

ভারতের বাণিজ্য মেলায় সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশি স্টল

Advertisement

ভারতের কলকাতার সায়েন্স সিটিতে শুরু হওয়া ২৪ তম ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেগা ট্রেড ফেয়ার-২০২৫-এ সরকারিভাবে অংশগ্রহণ না করলেও বেসরকারিভাবে বাংলাদেশের বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সরকারি অংশগ্রহণ স্থগিতাদেশ দিলেও, বাংলাদেশের বাংলা ক্রাফট-এর দশটি প্রতিষ্ঠান ১৭টি স্টল নিয়ে মেলায় এসেছেন। মেলার আয়োজক সংস্থা জানিয়েছে, সরকারিভাবে অংশগ্রহণ না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি স্টলগুলো নিয়ে দর্শনার্থীদের আগ্রহ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, কারণ কলকাতার অধিকাংশ মানুষের শিকড় বাংলাদেশে। এই ব্যক্তিগত উদ্যোগে অংশগ্রহণ দু’দেশের ব্যবসায়িক ও সাংস্কৃতিক সংযোগের গুরুত্বকে তুলে ধরে।

মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও স্টলের সংখ্যা

কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে শুরু হয়েছে ২২ দিনব্যাপী ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেগা ট্রেড ফেয়ার-২০২৫। এটি পূর্ব ভারতের বৃহত্তম এবং গোটা ভারতে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য মেলা হিসেবে পরিচিত। এই বছর মেলায় মোট ১৭টি দেশ অংশগ্রহণ করছে।

স্টলের সংখ্যা: বাংলাদেশের ১০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ১৭টি স্টল নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে।

সংস্থার নাম: এই প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বাংলা ক্রাফট-এর ব্যানারে এসেছে।

মেলার আয়োজক সংস্থা জিএস মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েটের সভাপতি (সেলস) উৎপল রায় জানান, প্রথমে বাংলাদেশ সরকারিভাবে এই মেলায় অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছিল। পরবর্তীতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সেই অংশগ্রহণে স্থগিতাদেশ দেয়। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা এখানে এসেছেন।

সরকারি স্থগিতাদেশের কারণ

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কেন এই বাণিজ্য মেলায় সরকারিভাবে অংশগ্রহণে স্থগিতাদেশ দিয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে এই স্থগিতাদেশের কারণে সরকারিভাবে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যকে বিশ্ব বাজারে সহজে তুলে ধরার সুযোগ পান। ইপিবির স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও বেসরকারি উদ্যোগ ও বাংলা ক্রাফটের ব্যানারে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, কলকাতার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা ও সম্ভাবনা কতটা বেশি।

কলকাতার জনগণের বিপুল আগ্রহ ও শিকড়ের টান

মেলার আয়োজক জিএস মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েটের সভাপতি (সেলস) উৎপল রায় নিশ্চিত করেন যে, বাংলাদেশি স্টলগুলো নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিনি এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করেন:

“কলকাতা শহর এবং আশেপাশের এলাকাগুলোতে বসবাসকারী মানুষের ৮২ শতাংশের শিকড় রয়েছে বাংলাদেশে।”

এই গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সংযোগের কারণে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতি কলকাতার মানুষের বিশেষ টান রয়েছে। ঢাকাই জামদানি শাড়ি, হস্তশিল্প, এবং ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের স্টলগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে।

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ও বার্তা

মেলায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্যের বিক্রি এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে উচ্চ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

বিক্রিবাট্টা: ঢাকাই জামদানি শাড়ির স্টলের এক কর্মকর্তা জানান, ‘গত বছর আমরা এই বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি। এবার এসেছি, আশা করব বিক্রিবাট্টা ভালো হবে।’

সম্পর্কের বার্তা: অপর এক স্টলের কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা পাশাপাশি দুটি প্রতিবেশী দেশ, আমরা চাই সম্পর্ক সবসময় ভালো থাকুক। আমরা ব্যবসায়িক মানুষ, আমরা এখানে আসতে চাই, আবার এখানকার ব্যবসায়ীরাও যাতে বাংলাদেশে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা করা উচিত। আমরা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এসেছি, আশা করি ভালো কিছু একটা হবে।’

এই ব্যবসায়ীরা কেবল পণ্য বিক্রি নয়, বরং দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও জনগণের বন্ধন জোরদার করার বার্তা নিয়ে এসেছেন।

মেলা উদ্বোধন ও আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ

শনিবার কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে ২২ দিনব্যাপী এই বাণিজ্য মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন:

তৃণমূল বিধায়ক: দেবাশীষ কুমার

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব: রাজেশ পান্ডে

বিসিসিআই-এর সভাপতি: অভিজিৎ রায়

এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল ফর হ্যান্ডিক্রাফ্টসের আহ্বায়ক: ওপি প্রহ্লাদকর

মেলায় এই বছর মোট ১৭টি দেশ অংশগ্রহণ করছে। থাইল্যান্ড ও তিউনিসিয়া ফোকাস কান্ট্রি হিসেবে রয়েছে। আফগানিস্তান এবং ঘানা পার্টনার কান্ট্রি হিসাবে রয়েছে। পার্টনার স্টেট গুজরাট এবং রাজস্থান, আর ফোকাস স্টেট হিসাবে থাকছে মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশ। মেলা চলবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

ব্যক্তিগত উদ্যোগের জয়

ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্য মেলায় সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ১৭টি স্টল নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অংশগ্রহণ দু’দেশের জনগণের বন্ধন এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনার গুরুত্বকে তুলে ধরে। ইপিবি সরকারিভাবে অংশগ্রহণ স্থগিত করলেও, বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা কলকাতার বাজারে তাদের পণ্যের চাহিদা পূরণে পিছপা হননি। এই ব্যক্তিগত উদ্যোগের সাফল্য ভবিষ্যতে দু’দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও সহজ ও সরল করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।

এম আর এম – ২৫২২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button