বাংলাদেশ

মিয়ানমারে ব্যস্ত চায়ের দোকানে বিমান হামলা, নিহত ১৮

Advertisement

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় সাগাইং অঞ্চলে অন্তত ১৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ২০ জন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় সাগাইং অঞ্চলের তাবায়িন টাউনশিপে এই রক্তক্ষয়ী হামলা চালানো হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকর্মীরা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে সাতজন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এবং বাকিরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ব্যস্ত চায়ের দোকানে বোমা আঘাত করায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই নৃশংসতা ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতাকে তুলে ধরে।

বিস্তারিত: ব্যস্ত চায়ের দোকান লক্ষ্যবস্তু

স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে সাগাইং অঞ্চলের তাবায়িন টাউনশিপে জান্তার বিমান থেকে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে দুটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই হামলার মধ্যে একটি বোমা সরাসরি এক ব্যস্ত চায়ের দোকানে আঘাত হানে।

  • হতাহতের সংখ্যা: হামলায় ১৮ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন।
  • কারণ: ওই কর্মকর্তা বলেন, হামলার সময় চায়ের দোকানটিতে ব্যাপক ভিড় থাকায় প্রাণহানির সংখ্যা বেশি হয়েছে। মিয়ানমারে সামাজিক আড্ডাস্থল হিসেবে চায়ের দোকানের বেশ পরিচিতি রয়েছে।
  • ধ্বংসের চিত্র: এক উদ্ধারকর্মী জানান, বিমান হামলায় চায়ের দোকান এবং আশপাশের অন্তত এক ডজন বাড়িঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, তিনি চায়ের দোকানে বসে টেলিভিশনে বক্সিং ম্যাচ দেখছিলেন, ঠিক সেই সময়ই বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। তিনি বিমানের শব্দ শুনে মাটিতে শুয়ে পড়েন এবং আগুনের শিখা দেখেন।

নিহতদের দাফন ও স্থানীয়দের আতঙ্ক

নিহতদের মধ্যে সাতজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং বাকি ১১ জন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। শনিবার সাগাইংয়ে নিহতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, কিছু মৃতদেহের মুখ চেনা যাচ্ছিল না বলে তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।

তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছি। কারণ নিহতদের কয়েকজনের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।” জান্তার নিপীড়নের ভয়ে তথ্য প্রদানকারীরা সবাই এএফপিকে পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন। এই ধরনের হামলা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তবে এই বিমান হামলার বিষয়ে জানতে দেশটির সামরিক সরকারের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

গৃহযুদ্ধ ও সামরিক জান্তার নৃশংসতা

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত বেসামরিক সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই মিয়ানমারে এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির সামরিক বাহিনী (জান্তা) ক্ষমতাকে সুসংহত করতে এবং বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দমনে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করছে।

সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এসব অভিযানে নৃশংসতা চালানোর গুরুতর অভিযোগ উঠলেও জান্তা বাহিনী তা অস্বীকার করেছে। প্রায়শই সামরিক বাহিনী বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর দাবি করলেও, বাস্তবে এসব হামলায় বেসামরিক নাগরিকরা হতাহত হন। এই ধারাবাহিক হামলা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে।

অতীতের বিমান হামলা ও যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন

সাগাইং অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা এবারই প্রথম নয়। চলতি বছরের মে মাসেও সাগাইং অঞ্চলে সামরিক জান্তার আরেক বিমান হামলায় ২২ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল, যাদের মধ্যে ২০ জনই ছিল শিশু

উল্লেখ্য, সেই সময় দেশটিতে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর জান্তা সরকার একটি স্বল্প সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে তারা শিশুদের ওপর হামলা চালায়। বারবার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এই ধরনের নির্বিচার হামলা আন্তর্জাতিক মহলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি ও ক্ষমতা সুসংহত করার কৌশল

গৃহযুদ্ধে টালমাটাল মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে ক্ষমতাকে সুসংহত করতে চাইছে। চলতি মাসের শেষের দিকে কয়েক ধাপে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এই নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শনিবার থেকে বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এদিন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থিত মিয়ানমার দূতাবাসে কিছু ভোটারকে ভোট দিতে দেখা গেছে। তবে সামরিক বাহিনীর এই ধারাবাহিক নৃশংসতা এবং গৃহযুদ্ধের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

বেসামরিকদের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ

মিয়ানমারে ব্যস্ত চায়ের দোকানে বিমান হামলায় ১৮ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু সামরিক জান্তার মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরেকটি স্পষ্ট উদাহরণ। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এই ধরনের নির্বিচার হামলা গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মিয়ানমারের বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জান্তা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানায়।

এম আর এম – ২৫২০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button