ফ্যাক্ট চেক

বছরের সবচেয়ে বড় ও শেষ সুপারমুন দেখল বিশ্ব

Advertisement

এ বছরের তৃতীয়, সর্ববৃহৎ ও শেষ সুপারমুন ‘কোল্ড সুপারমুন’ বিশ্বের নানা প্রান্তে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে উদিত হওয়া এই উজ্জ্বল চাঁদের অপূর্ব সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে কোটি কোটি দর্শককে। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য মতে, ২০২৫ সালের এটাই ছিল শেষ দৃশ্যমান সুপারমুন। পূর্ণিমার সময় চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথের সবচেয়ে কাছে অবস্থান করায় এটি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বড় এবং বেশি উজ্জ্বল দেখা যায়। শীতের মধ্যে আবির্ভাব হয়েছে বলে উত্তর গোলার্ধে এটিকে ‘কোল্ড সুপারমুন’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জ্যোতির্বিজ্ঞানপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীরা উৎসাহ আর আনন্দের সঙ্গে এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করেছেন।

সুপারমুন কী এবং কেন এটি এত উজ্জ্বল?

সুপারমুন একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘটনা, যা পূর্ণিমার সময় ঘটে থাকে। চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে একটি সম্পূর্ণ বৃত্তাকার কক্ষপথে ঘোরে না, বরং এটি একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথ অনুসরণ করে। ফলে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব সর্বদা পরিবর্তিত হয়।

  • সুপারমুনের সংজ্ঞা: চাঁদ যখন পূর্ণিমার সময় পৃথিবীর কক্ষপথের নিকটতম বিন্দুর কাছাকাছি (বা তার ৯০ শতাংশের মধ্যে) অবস্থান করে, তখনই সুপারমুন ঘটে।
  • দৃশ্যমানতা: এই সময়ে চাঁদকে পৃথিবী থেকে স্বাভাবিক পূর্ণিমার চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বড় এবং কিছুটা বেশি উজ্জ্বল দেখায়। চাঁদের এই অসাধারণ সৌন্দর্য মহাকাশপ্রেমীদের জন্য একটি বিরল উপহার।

নাসা জানিয়েছে, সাধারণত বছরে তিন থেকে চারবার সুপারমুন দেখা যায় এবং সেগুলো নিয়মিত বিরতিতে আসে। ২০২৫ সালে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সুপারমুন দেখা গেল। এর আগে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে অন্য দুটি সুপারমুন দেখা গিয়েছিল।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ‘কোল্ড সুপারমুন’-এর দৃশ্য

সময়ভেদে এই উজ্জ্বল সুপারমুন বিশ্বের নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের নজর কেড়েছে। শীতকালে আবির্ভাব হওয়ায় উত্তর গোলার্ধে বছরের শেষ এই সুপারমুনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোল্ড সুপারমুন’ বা শীতল চাঁদ।

  • লাতিন আমেরিকা: অসাধারণ এক জোছনা উপভোগ করতে সাগর পাড়ে জড়ো হন আর্জেন্টিনা, চিলি ও স্পেনের অনেক নাগরিক। আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসের রিও দে লা প্লাতার তীরে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। লাতিন আমেরিকার কেউ কেউ এমনকি হাতে ট্যাটু করেও এই বিরল দৃশ্য উপভোগ করেন।
  • মধ্যপ্রাচ্য: মিশরের কায়রো সিটাডেলেও সুপারমুনের এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। সুপারমুনের সময় সিটাডেলের পেছনে আকাশ আলোকিত হয় এক অপরূপ দৃশ্যে, যা কোনও ভৌতিক রূপকথার গল্পের চেয়ে কম ছিল না।
  • এশিয়া: পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী লাহোরে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শত শত মানুষ একত্রিত হয়ে উপভোগ করেন বছরের অন্যতম বৃহৎ সুপারমুন।
  • ইউরোপ: স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জেও দর্শনার্থীরা এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করেন। চোখ ধাঁধানো এবং স্পষ্ট এই সুপারমুনের সৌন্দর্য স্প্যানিশ দ্বীপপুঞ্জবাসীদের জন্য ছিল উপভোগ্য।

দর্শকদের প্রতিক্রিয়া: মুগ্ধতা ও আনন্দের প্রকাশ

এই বিরল মহাজাগতিক ঘটনাটি দর্শকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ ও আনন্দ সৃষ্টি করেছে। প্রকৃতিপ্রেমী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানপ্রেমীরা নিজ নিজ এলাকা থেকে এর সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। অনেকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কিংবা বাড়ির ছাদ থেকে অবাক চোখে শেষ সুপারমুন উপভোগ করেন।

আর্জেন্টিনার একজন দর্শক, যার হাতে চাঁদের সব পর্যায়ের ট্যাটু করা আছে, তিনি বলেন, “আমার খুব ভালো লাগছে। এটি অকল্পনীয়। আমি রাত, তারা, চাঁদ উপভোগ করতে খুব পছন্দ করি। পূর্ণিমা আমি খুবই পছন্দ করি। এটি সবসময়ই আমাকে অনেক টানে।” তিনি আরও বলেন, চাঁদ এমনিতেই অনেক সুন্দর, আর যেহেতু এটা সুপারমুন, তাই অবশ্যই এটি উপভোগ্য। এই ধরনের মন্তব্য প্রমাণ করে, মহাজাগতিক ঘটনাগুলো মানুষের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলে।

সুপারমুনের অন্যান্য নাম ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

পূর্ণিমা এবং চাঁদের অবস্থান অনুযায়ী সুপারমুনের বিভিন্ন নাম রয়েছে।

  • হার্ভেস্ট মুন: অক্টোবর মাসের সুপারমুনকে হার্ভেস্ট মুন (Harvest Moon) বলা হয়।
  • বিভার মুন: নভেম্বর মাসের সুপারমুনকে বিভার মুন (Beaver Moon) বলা হয়।
  • কোল্ড মুন: উত্তর গোলার্ধে ডিসেম্বরের পূর্ণিমাকে ‘কোল্ড মুন’ বলা হয়, যা শীতের আগমনী বার্তা দেয়। তবে মজার বিষয় হলো, লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় এটি গ্রীষ্মকালের আগমনী সংকেত হিসেবে দেখা যায়।

সুপারমুন এবং চাঁদের বিভিন্ন নামকরণ বিশ্বের সংস্কৃতি ও জলবায়ুর ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে।

প্রকৃতির অপার রহস্য

বছরের সবচেয়ে বড় ও শেষ সুপারমুন ‘কোল্ড সুপারমুন’ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে মুগ্ধ করেছে। এই মহাজাগতিক দৃশ্যটি যেমন আনন্দ দিয়েছে, তেমনি পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের কক্ষপথের অপার রহস্যকে তুলে ধরেছে। নাসা জানিয়েছে, ২০২৫ সালে তিনটি সুপারমুন দেখা গেলেও, আগামীতে এই ধরনের দৃশ্য উপভোগ করতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। প্রকৃতির এই বিরল সৌন্দর্য উপভোগ করা জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং সাধারণ মানুষের জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

এম আর এম – ২৫১৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button