ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) সংস্কার এবং মোবাইল ফোন আমদানিতে বিদ্যমান সিন্ডিকেট প্রথা বিলোপসহ বিভিন্ন দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে সব মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি। রবিবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে এই দোকান বন্ধ রাখার কর্মসূচি চলবে। একইসঙ্গে, দাবি আদায়ে ওই দিনই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)-এর কার্যালয় ঘেরাও করবেন তারা। এই কঠোর কর্মসূচির ফলে দেশের মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি এবং আমদানি খাতে এক বিশাল অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে।
আন্দোলনের ঘোষণা ও মূল ৩ দফা দাবি
বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সেক্রেটারি আবু সায়ীদ পিয়াস সাংবাদিকদের এই অনির্দিষ্টকালের কর্মসূচির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ব্যবসায়ীদের মূল দাবিগুলো প্রযুক্তি খাত এবং তাদের জীবিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত:
১. এনইআইআর সংস্কার: ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) সিস্টেমে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার আনা। ২. সিন্ডিকেট প্রথা বাতিল: মোবাইল ফোন আমদানি ও বিক্রিতে বিদ্যমান সিন্ডিকেট প্রথা বাতিল করা। ৩. আমদানি উন্মুক্তকরণ: মোবাইল ফোন আমদানির সুযোগ সকলের জন্য উন্মুক্ত করা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাদের দাবিগুলো দীর্ঘ দিন ধরে উপেক্ষিত হচ্ছে। বাধ্য হয়েই তাঁরা এই কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
বিটিআরসি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি
দাবি আদায়ে বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথে হেঁটেছে। দোকান বন্ধ রাখার পাশাপাশি রবিবার (৭ ডিসেম্বর) তাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি:
- স্থান: রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যালয়।
- কর্মসূচি: বিটিআরসি কার্যালয় ঘেরাও।
এই ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন। এর আগে, গত ৩০ নভেম্বর পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন শপিং মলের মোবাইল ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা দোকান বন্ধ রেখে রাজধানীর কারওয়ান বাজার-পান্থপথ এলাকায় জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেছিলেন।
এনইআইআর বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) ব্যবস্থাটি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এনইআইআর চালুর মূল উদ্দেশ্য হলো টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অনিবন্ধিত, চুরি হওয়া বা অনুমোদনহীন আমদানি করা মোবাইল ফোনের ব্যবহার রোধ করা।
কিন্তু ব্যবসায়ীরা এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন:
- ক্ষতিগ্রস্ত হবে লাখো ব্যবসায়ী: তাদের অভিযোগ, এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে লাখো ব্যবসায়ী ও তাঁদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, এই ব্যবস্থার ফলে বাজারে থাকা অনেক মোবাইল হ্যান্ডসেটই অবৈধ হয়ে যাবে।
- বিশেষ গোষ্ঠীর লাভ: নতুন এই নিয়মের ফলে একটি বিশেষ গোষ্ঠী লাভবান হবে এবং বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করবে।
- গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি: ব্যবসায়ীরা আরও অভিযোগ করেন, এই সিন্ডিকেট ও নতুন নিয়মের কারণে বাড়তি করের চাপে গ্রাহক পর্যায়ে মোবাইলের দাম বেড়ে যাবে।
কালোবাজারি ও গ্রাহক অধিকারের প্রশ্ন
এনইআইআর ব্যবস্থাটি সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চালু করা হলেও, ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগগুলো কালোবাজারি এবং গ্রাহক অধিকারের প্রশ্নকে সামনে এনেছে। যদি এনইআইআর ব্যবস্থার বাস্তবায়ন ত্রুটিপূর্ণ হয়, তবে তা বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে, এনইআইআর-এর লক্ষ্য হলো চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করা এবং অবৈধ আমদানির মাধ্যমে সরকার যে রাজস্ব হারাচ্ছে, তা বন্ধ করা। ব্যবসায়ীরা চান, এনইআইআর-এর এমন সংস্কার করা হোক যেন সৎ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং গ্রাহকরাও সাশ্রয়ী মূল্যে ফোন কিনতে পারেন।
প্রযুক্তিনির্ভর বাণিজ্যে অচলাবস্থা
বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির অনির্দিষ্টকালের জন্য দোকান বন্ধ রাখার এই ঘোষণা দেশের প্রযুক্তিনির্ভর বাণিজ্যে এক বড় ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি করবে। তাদের দাবিগুলো এনইআইআর ব্যবস্থার সংস্কার, সিন্ডিকেট প্রথা বাতিল এবং অবাধ আমদানির সুযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে। বিটিআরসি এবং সরকারকে দ্রুত এই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনায় বসে এনইআইআর-এর একটি গ্রহণযোগ্য ও ব্যবসাবান্ধব কাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে একদিকে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, অন্যদিকে লাখো মোবাইল ব্যবসায়ী ও গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
এম আর এম – ২৫১৬, Signalbd.com



