রাজনীতি

ঢাকা-৯ আসন নিয়ে ব্যতিক্রমী সাহায্য চাইলেন তাসনিম জারা

Advertisement

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৯ আসন (খিলগাঁও, সবুজবাগ, মুগদা, মান্ডা) থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. তাসনিম জারা। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটিকে বলা যেতে পারে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ, কারণ তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সততা, স্বচ্ছতা এবং প্রমাণিত সীমিত ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আমাদের দেশে একজন প্রার্থী নির্বাচনে আইনগতভাবে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করেন, তবে নির্বাচন কমিশনের কাছে জানান মাত্র ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এটি একটি বড় অসততা এবং মিথ্যার রাজনীতির উদাহরণ।”

ডা. তাসনিম জারা আরও জানান, “আমি এই ধরনের অসততা ও মিথ্যার রাজনীতি করতে চাই না। আমি এনসিপি থেকে ঢাকা-৯ আসনের জন্য মনোনয়ন নিয়েছি এবং প্রতিজ্ঞা করছি, আইনে অনুমোদিত টাকার বাইরে এক টাকাও ব্যয় করব না।”

নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও সততার প্রতিশ্রুতি

ডা. তাসনিম জারার এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরল বলা যায়। তিনি উল্লেখ করেছেন, “অনেকে বলেছেন, এত কম বাজেটে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা প্রমাণ করব এটা সম্ভব। আমরা নির্বাচনের আগে নিয়মিত জানাব কত টাকা পেয়েছি এবং কত টাকা খরচ করেছি। সবকিছু হবে স্বচ্ছভাবে।”

এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারণ জনগণ প্রার্থীর অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা সম্পর্কে সচেতন হবে।

তিনি বলেন, “আমরা একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করব যে, সততার সঙ্গে, অর্থ আর পেশিশক্তির বাইরে এসে নির্বাচন করা যায়। তবে এই পথচলায় আপনাদের সাহায্য প্রয়োজন।”

ডা. জারা এই ব্যতিক্রমী প্রচারাভিযান চালানোর জন্য দেশের যেকোনো প্রান্তের মানুষ ও প্রবাসীদের সহায়তা আহ্বান করেছেন।

সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান

তিনি বলেন, “যে কাজগুলো অন্য প্রার্থীরা টাকা দিয়ে করান, আমাদের সেগুলো করতে হবে আপনাদের সময়, শ্রম ও অংশগ্রহণ দিয়ে। আমরা স্বেচ্ছাসেবক টিম গড়ব এবং একসাথে কাজ করব।”

ডা. জারা বিভিন্নভাবে সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছেন, যা মূলত এগুলো:

  • গ্রাফিক ডিজাইন বা পোস্টার তৈরি করা
  • ভিডিও শুটিং বা এডিটিং
  • উঠান বৈঠকের আয়োজন
  • ফান্ড সংগ্রহে সহায়তা
  • বাসায় বাসায় মানুষদের কাছে আমাদের মেসেজ পৌঁছে দেওয়া
  • এবং আরও অনেক ধরনের কার্যক্রমে সহায়তা

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, “আপনি নিজেও জানাতে পারবেন কীভাবে সাহায্য করতে চান। আমরা চাই এবারের নির্বাচন হোক জনগণের নিজের নির্বাচন। সততার সঙ্গে রাজনীতি করা সম্ভব, সেটা আমরা একসাথে প্রমাণ করব।”

ঢাকা-৯ আসনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

ঢাকা-৯ আসনটি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে প্রচুর সংখ্যক ভোটার থাকায় প্রতিটি নির্বাচনের ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ।

  • খিলগাঁও: এটি একটি পুরোনো ও বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে মিশ্র জনসংখ্যা থাকায় ভোটের ধারা পূর্বাভাস করা কঠিন।
  • সবুজবাগ: প্রধানত মধ্যবিত্ত এবং শিক্ষিত পরিবারের সংখ্যা বেশি। রাজনৈতিক সচেতনতা বেশি, তাই ভোটের ফলাফলে প্রার্থীকে স্বচ্ছতা দেখানো গুরুত্বপূর্ণ।
  • মুগদা: একটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং আধুনিক আবাসিক এলাকা। এখানে সামাজিক মিডিয়ার প্রভাব বেশি।
  • মান্ডা: খিলগাঁও ও মুগদার সংলগ্ন এলাকা, যেখানে নতুন প্রজন্মের ভোটারের সংখ্যা বেশি।

ঢাকা-৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রার্থীকে কেবল রাজনৈতিক কৌশল নয়, সততা ও জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। ডা. তাসনিম জারার এই স্বচ্ছতা ও সীমিত ব্যয়ের পদক্ষেপ ভোটারদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে।

স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

ডা. তাসনিম জারা যে ফরমের মাধ্যমে সাহায্য চেয়েছেন, তার লক্ষ্য হলো:

  1. স্বেচ্ছাসেবক টিম তৈরি করা
  2. জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা
  3. নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখা
  4. ভোটারদের মধ্যে সততার মানসিকতা প্রতিষ্ঠা করা

ফরমের লিংক: https://forms.gle/V4rLVK7fHAwNL2AY6

রাজনীতিতে সততার গুরুত্ব

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাব অনেক বেশি। অধিকাংশ প্রার্থী কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। এই পরিস্থিতিতে স্বল্প বাজেট ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন করাটা ব্যতিক্রমী।

ডা. জারার উদ্যোগ প্রমাণ করে যে, নির্বাচনে সততা বজায় রেখে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব। এটি অন্য প্রার্থীদের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।

তিনি বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যদি রাজনীতি দুর্নীতি, পেশিশক্তি ও মিথ্যার বৃত্ত থেকে বের হয়ে সত্যিকারের জনগণের হাতে ফিরে আসে, তাহলে সম্ভাবনা সীমাহীন।”

সততার রাজনীতি, জনগণের হাতে ক্ষমতা

ডা. জারা মনে করেন, রাজনীতিতে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণই সবচেয়ে শক্তিশালী। তিনি নিজেও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করতে চান যে:

  • সীমিত বাজেটে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো সম্ভব
  • স্বচ্ছতা বজায় রাখা সম্ভব
  • জনগণের সময় ও শ্রমকে মূল্যায়ন করা যায়

এই উদ্যোগ কেবল একটি নির্বাচন নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

ঢাকা-৯ আসনে ডা. তাসনিম জারার প্রচারণা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে। স্বচ্ছতা, সততা, সীমিত বাজেট এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করতে চান যে, রাজনীতি কেবল অর্থের লড়াই নয়, এটি জনগণের বিশ্বাস ও সমর্থনের মধ্যেই নির্ভরশীল।

তিনি দেশের প্রতিটি প্রান্তের মানুষ এবং প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও সততার ভিত্তিতে দেশের রাজনীতিকে নতুন দিশা দেখাতে।

ঢাকা-৯ আসনের এই নির্বাচন কেবল একজন প্রার্থীর নয়, বরং জনগণের নির্বাচনেরও প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।

MAH – 14149 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button