ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ নেতার শক্তিশালী বার্তা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) বর্তমান ভিপি সাদিক কায়েম সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পাবলিক ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত তারুণ্য উৎসব ও নির্বাচনী সমাবেশে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি জানান, দেশে রাজনীতি আর দূর-দূরান্তের লন্ডন, দিল্লি বা পিন্ডিতে বসে করা যাবে না। বরং দেশের মাটি, ভাষা, সংস্কৃতি এবং তরুণ শক্তিকে ধারণ করে রাজনীতি করতে হবে।
সাদিক কায়েম বলেন, “আমরা তরুণরা গত ১৬ বছরে ভোট দিতে পারিনি। আজ আমাদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যেভাবে জুলাই আন্দোলন আমাদের শহীদদের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে এনেছিল, ঠিক তেমনি আমাদেরও ভোটকেন্দ্রগুলোকে নিরাপদ রাখতে ভূমিকা রাখতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে তরুণদের নেতৃত্ব, ইনসাফের মান, এবং দেশপ্রেমকে ধারণ করতে হবে। লন্ডন বা দিল্লিতে বসে আর কোনো রাজনীতি চলবে না। আমাদের মাটি ও ভাষাকে বুঝে দেশের মাটিতেই রাজনীতি করতে হবে।”
তরুণরা প্রতিবাদে সক্ষম
সাদিক কায়েম তরুণদের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, “আজকের তরুণরা প্রতিবাদ করতে শিখে গেছে। তারা সচেতন, রাজনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে গড়ে তুলেছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, যেন জুলাই আন্দোলনের শহীদরা যে আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন, আমরা তা পূরণ করতে পারি। আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা এখনো পূর্ণ হয়নি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “গত ১৬ বছরে দেশে যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো তৈরি হয়েছিল, তা আমাদের শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। তাই বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য ইনসাফের প্রতিনিধিদেরকে নির্বাচন করে আনতে হবে। ইতিমধ্যে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা তাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দিয়েছেন। বিপ্লবের আগে ও পরে তাদের মান ও কার্যক্ষমতায় কোনো পরিবর্তন হয়নি।”
সীমান্তে ভারতীয় চাপের বিরুদ্ধে তরুণদের সচেতনতা
সাদিক কায়েম বিশেষভাবে দেশের সীমান্ত সমস্যা এবং ভারতীয় নীতি সম্পর্কে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “গত ৫৪ বছরে এই অঞ্চলে ভারত যেভাবে আমাদের ওপর প্রভাব ও নির্যাতন চালিয়েছে, তার প্রতিবাদ আমাদের ইনসাফের প্রতিনিধিরা করেছে। তাই তাদেরকে ব্যাপকভাবে বিজয়ী করে আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরুণরা যে পথে এগোবে, পুরো বাংলাদেশও সেই পথে যাবে।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে সীমান্তে যে সমস্ত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার বিচার স্বাধীন বাংলাদেশেই হবে। কোনো ধরনের বিদেশি প্রভাব আমাদের দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে না। এই স্বাধীন বাংলাদেশ আর ভারতের প্রেসক্রিপশনে চলবে না।”
জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও তরুণ শক্তি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জুলাই আন্দোলন তরুণদের জন্য একটি শক্তিশালী উদাহরণ। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন, যেখানে ছাত্রদের নেতৃত্বে দেশজুড়ে আন্দোলন তৈরি হয়েছিল, তা দেশের রাজনীতিতে নতুন শক্তির উদ্ভব ঘটিয়েছে।
সাদিক কায়েম এই প্রসঙ্গে বলেন, “জুলাই আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছে যে, তরুণরা যে কোনো সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আমাদের সেই উদ্দীপনা ধরে রাখতে হবে এবং ভোটকেন্দ্র, প্রশাসনিক অঞ্চল ও রাজনীতির প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা ও সচেতনতা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যারা দেশপ্রেমকে ধারণ করে রাজনীতি করে, তারা সঠিক পথে নেতৃত্ব দিতে পারে। আমাদের মাটি, ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে বোঝার মাধ্যমে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে হবে।”
শিক্ষা, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন
সাদিক কায়েম দেশের বর্তমান শিক্ষা, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার অবনতির বিষয়েও সচেতন। তিনি বলেন, “গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার কারণে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তরুণরা যখন এই ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে এগোবে, তখন ইনসাফের প্রতিনিধিরা দেশের পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিতে পারবে।”
তিনি স্পষ্ট করেন, “যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তারা কাজের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। আমরা নতুন প্রজন্মের সাথে একত্রে দেশকে পুনর্গঠন করতে চাই।”
তরুণ নেতৃত্বে বিশ্বাস
সাদিক কায়েম তরুণদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তরুণরা দেশের ভবিষ্যৎ। তারা যেখানে যাবে, দেশও সেই দিকে যাবে। আমাদের কাজ হলো তরুণদের ক্ষমতায়ন করা এবং তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা। শুধু রাজনৈতিক আন্দোলনে নয়, দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে তরুণদের সক্রিয় ভূমিকা থাকা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “তরুণদের মধ্যে সচেতনতা ও নেতৃত্ব বিকাশের মাধ্যমে আমরা দেশের রাজনীতিকে নতুন দিশা দেখাতে পারব। দেশে রাজনীতি আর বিদেশি প্রভাবের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না। আমরা দেশের মাটি থেকে নেতৃত্ব গড়ে তুলব।”
সমাপনী বক্তব্য
ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত তারুণ্য উৎসব ও নির্বাচনী সমাবেশ শেষে সাদিক কায়েম সংক্ষেপে বলেন, “আমাদের তরুণদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের শহীদদের আকাঙ্ক্ষা, আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এবং দেশপ্রেমকে ধারণ করে রাজনীতি করতে হবে। লন্ডন বা দিল্লিতে বসে আর কোনো রাজনীতি সম্ভব নয়। আমাদের মাটিতেই, আমাদের দেশের মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করতে হবে।”
সমৃদ্ধ সংবাদ
সাদিক কায়েমের এই বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি বাংলাদেশের তরুণদের শক্তি ও নেতৃত্ব বিকাশের আহ্বান। দেশের যুব সমাজকে প্রেরণা দেওয়ার পাশাপাশি এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে। তরুণরা যদি একত্রিত হয়, দেশকে নতুন দিশা দেখাতে পারে।
এছাড়া, সাদিক কায়েমের বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে রাজনীতি আর বিদেশি প্রভাবের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, বরং দেশের মাটি, ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে ইনসাফের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে।
এই ধরনের রাজনৈতিক সমাবেশ ও তরুণ নেতৃত্বের উদাহরণ দেশের যুব সমাজকে প্রেরণা দিচ্ছে এবং আগামী নির্বাচনে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছে।
MAH – 14148 I Signalbd.com



