বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে লন্ডন নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর এবার তাঁর ছেলে তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান দেশে ফিরছেন। ডা. জুবাইদা রহমান আগামীকাল শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার দিকে ঢাকায় পৌঁছবেন বলে নিশ্চিত করেছে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন। তাঁর দেশে ফেরার মূল উদ্দেশ্য হলো, সঙ্গে থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে কাতারের অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে তাঁর চিকিৎসার সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
জুবাইদা রহমানের প্রত্যাবর্তনের কারণ ও সময়সূচি
ডা. জুবাইদা রহমান লন্ডন থেকে সার্বিক সমন্বয় করে গেলেও, খালেদা জিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণের জন্য তিনি সরাসরি উপস্থিত থাকতে চাইছেন। তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে জানিয়েছেন:
- আগমনের সময়: ডা. জুবাইদা রহমান আজ (বৃহস্পতিবার) রাতেই দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে কাল সকালে ঢাকা পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন।
- মূল উদ্দেশ্য: ‘সঙ্গে থেকে দেশনেত্রীকে কাতারের অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন নিয়ে যেতে পারেন।’
লন্ডনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ইতিমধ্যে ঢাকায় এসেছেন। ডা. জুবাইদা রহমানের আসা বা না আসার বিষয় মাথায় রেখেই এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে আনা হয়েছে। ম্যাডামের পুত্রবধূ শর্মিলা (শামিলা) রহমান, কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মকর্তাও এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সার্বক্ষণিক পাশে থাকবেন বলে জানা গেছে।
উন্নত চিকিৎসার সিদ্ধান্ত ও লন্ডনের প্রস্তুতি
ডাক্তারদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ এবং দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে অতি শীঘ্র লন্ডনের হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে। দীর্ঘ ১২ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর এটি তাঁর চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি বড় মোড়।
মাহদী আমিনের পোস্ট অনুযায়ী, ‘উন্নত ও সর্বাধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ম্যাডামকে অতি শীঘ্র লন্ডনের হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ এই চিকিৎসা প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ডা. জুবাইদা রহমান। লন্ডনের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রস্তুতি—সবকিছুর তত্ত্বাবধান করছেন তারেক রহমান।
তারেক রহমানের ভূমিকা: মায়ের সুস্থতা ও জাতীয় দায়িত্ব
ডা. জুবাইদা রহমান ঢাকায় আসায় তারেক রহমানের দেশে না ফেরার বিষয়েও একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাঁর উপদেষ্টা মাহদী আমিন। তিনি বলেন, তারেক রহমান যদি ‘পপুলার পলিটিক্সকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে ছুটে আসতেন’, তাহলে তিনি চিকিৎসক স্ত্রীর সঙ্গে একযোগে নিখুঁতভাবে যে তদারকি করছেন, তা এভারকেয়ার হাসপাতালের হৈ চৈ, ভিড়, বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে করা যেত না।
মাহদী আমিন উল্লেখ করেন:
- যুক্তি প্রাধান্য: তারেক রহমান ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়, মায়ের সুস্থতা ও দেশের স্থিতির স্বার্থে যুক্তিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
- সন্তানের দায়িত্ব: তিনি একই সঙ্গে সন্তানের দায়িত্ববোধে নিবেদিত, আবার জাতীয় নেতার দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ।
- প্রত্যাবর্তনের অঙ্গীকার: ম্যাডাম নিরাপদে লন্ডনে পৌঁছালে, তাঁকে একটু সেটেল করে দিয়ে ও স্থানীয় সব ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করে শীঘ্রই তিনি দেশে ফিরবেন।
তারেক রহমান মনে করেন, তাঁর দেশে আসা মানেই লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল, জনসমুদ্রের উত্তাল আবেগ, যা খালেদা জিয়া, অন্য রোগী, চিকিৎসা পরিবেশ, এমনকি দেশের স্থিতির জন্যও ভালো হতো না।
ভিআইপি নিরাপত্তা ও এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রস্তুতি
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতির জন্য সরকারও সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। সরকার ইতোমধ্যে তাঁকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (VIP) ঘোষণা করেছে এবং এসএসএফের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। ঢাকাস্থ কাতার দূতাবাস জানিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য দেশটির আমিরের বিমান-কাতার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে।
মঙ্গলবার, নিরাপত্তার মহড়া হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতালের নিকটস্থ দুটি উন্মুক্ত মাঠে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার পরীক্ষামূলক অবতরণ ও উড্ডয়ন পরিচালনা করবে। এটি প্রমাণ করে, তাঁর বিদেশ যাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
মানবিক দায়িত্ব ও রাজনৈতিক কৌশল
ডা. জুবাইদা রহমানের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবিক পদক্ষেপ। তাঁর এই প্রত্যাবর্তন তারেক রহমানের রাজনৈতিক কৌশলকে স্পষ্ট করে—যেখানে তিনি মায়ের জীবনরক্ষাকে ব্যক্তিগত আবেগ ও জনপ্রিয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। জুবাইদা রহমান শুক্রবার সকালে ঢাকায় পৌঁছানোর পর পরই বেগম জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন, যা তাঁর দীর্ঘদিনের অসুস্থতার চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় নতুন আশাবাদ সৃষ্টি করেছে।
এম আর এম – ২৪৯৮, Signalbd.com



