ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক ও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ডাকযোগে ভোট প্রদানের সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই বিশেষ ব্যবস্থার জন্য তৈরি করা ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন চলবে আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশন থেকে এই সময়সীমা ঘোষণা করে যারা এখনও অ্যাপটিতে নিবন্ধন করেননি, তাদের দ্রুত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ভোটে অংশগ্রহণকারীর হার বাড়ানো এবং দেশের বাইরে থাকা ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে চাইছে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও সময়সীমা
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে যে, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসে থাকা ভোটারদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া আগামী ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে শেষ হবে। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে যারা নিবন্ধন করবেন, শুধু তারাই ডাকযোগে তাঁদের পোস্টাল ব্যালট পেপার পাবেন।
অ্যাপটি গত ১৮ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছিল। মূলত দুটি প্রধান গোষ্ঠীর ভোটারদের জন্য এই বিশেষ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে:
১. প্রবাসী ভোটার: বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি ভোটাররা। ২. সরকারি চাকরিজীবী: দেশের অভ্যন্তরে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত যে সকল ভোটার নিজ কেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন না।
এই দুটি গোষ্ঠীর ভোটাররা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করে ডাকযোগে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ইসি বারবার প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁরা নিবন্ধন সম্পন্ন করেন।
‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের উদ্দেশ্য ও সুবিধা
‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ চালু করার মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশের বাইরে বসবাসকারী এবং নির্বাচনকালীন সময়ে নিজ এলাকা থেকে দূরে থাকা ভোটারদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া। এই অ্যাপের মাধ্যমে ভোটাররা তাঁদের ভোটার তথ্য যাচাই এবং পোস্টাল ব্যালট পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।
এই পদ্ধতিটি প্রবাসীদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। কারণ, বহু প্রবাসী কর্মব্যস্ততা এবং ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন না। এই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে তাঁরা নিজ নিজ দেশ থেকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। একইসঙ্গে, সরকারি চাকরিজীবীরা যাঁরা নির্বাচনী দায়িত্ব বা অন্য কোনো কারণে নিজ এলাকায় উপস্থিত থাকতে পারেন না, তাঁরাও তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
নিবন্ধনে উৎসাহিত করার জন্য ইসির আহ্বান
নির্বাচন কমিশন দেশের জনগণের কাছে বিশেষ আহ্বান জানিয়েছে। যারা দেশে আছেন, তাঁদের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে যে, তাঁরা যেন প্রবাসে বসবাসরত তাঁদের নিকটজনদের ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে, ভোটে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেন।
এই আহ্বানটি প্রমাণ করে যে, ইসি প্রবাসীদের ভোটদানে উৎসাহিত করার জন্য দেশের অভ্যন্তরেও সচেতনতা তৈরি করতে চাইছে। ভোটদানের হার বাড়ানো এবং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইসি।
পোস্টাল ব্যালট প্রাপ্তির নির্দেশনা
ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালট পেতে হলে প্রবাসীদের কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলতে হবে:
- সঠিক ঠিকানা প্রদান: প্রবাসীদের তাঁদের স্ব স্ব দেশের সঠিক ঠিকানা প্রদান করতে হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে ব্যালট পেপারটি যেন কোনো ভুল ঠিকানায় না যায়।
- বিকল্প ঠিকানা: প্রয়োজনে বন্ধু/আত্মীয়ের ঠিকানা অথবা নিকটস্থ সুপরিচিত কোনো প্রতিষ্ঠান/ভবনের ঠিকানা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
- ব্যালট পেপার গ্রহণ: নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ইসি ডাকযোগে তাঁদের ঠিকানায় ব্যালট পেপার পাঠাবে। প্রবাসীরা সেই ব্যালটে ভোট দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা আবার ডাকযোগে ইসির কাছে ফেরত পাঠাবেন।
এই প্রক্রিয়াটি নিশ্চিত করবে যে, প্রবাসীরা যেন নির্ভুলভাবে তাঁদের ভোট প্রদানের সুযোগ পান।
বহুদলীয় গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের গুরুত্ব
‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এটি দেশের সকল নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছাকে তুলে ধরে। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন, তেমনি দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তাঁদের ভূমিকা নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো এবং ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় যেন কোনো প্রকার কারচুপি বা অনিয়ম না হয়, সেদিকে কঠোর নজরদারি বজায় রাখতে হবে। এই ধরনের ডিজিটাল পদ্ধতির সফলতা পরবর্তী নির্বাচনগুলোতেও এর ব্যবহারকে উৎসাহিত করবে।
ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণের পথে যাত্রা
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী ও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু রাখার সিদ্ধান্ত ইসির একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এই উদ্যোগটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তি বাড়াবে এবং দেশের বাইরে থাকা নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে। ইসিকে এই সময়ের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে প্রবাসীদের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
এম আর এম – ২৪৮৪, Signalbd.com



