বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (০৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ৭টার পর তিনি হাসপাতালে পৌঁছান। এ সময় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। দেশের রাজনীতিতে দুই ভিন্ন মেরুর এই শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বের মধ্যেকার এই মানবিক সাক্ষাৎ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। এর আগে, মঙ্গলবার রাতে তিন বাহিনীর প্রধানরাও হাসপাতালে এসে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার পরিদর্শন ও স্বাগত জানানো
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সন্ধ্যা ৭টা ৭ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁকে হাসপাতালের নিচ থেকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি চেয়ারপারসনের কেবিনে নিয়ে যান বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার।
ডা. ইউনূস হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এবং দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। প্রধান উপদেষ্টার এই পরিদর্শন দেশের প্রধান রাজনৈতিক নেতার প্রতি রাষ্ট্রের মানবিক সংবেদনশীলতা এবং চিকিৎসার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
তিন বাহিনীর প্রধানদের পূর্ব পরিদর্শন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাসপাতালে যাওয়ার ঠিক আগের দিন, মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। ওই দিন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা সম্মিলিতভাবে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। তারা মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের কাছ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন এবং রাত ৯টা ২০ মিনিটে হাসপাতাল থেকে বিদায় নেন।
- সেনাবাহিনী প্রধান: জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান
- নৌবাহিনী প্রধান: অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান
- বিমানবাহিনী প্রধান: এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন
সামরিক নেতৃত্বের এই উচ্চ পর্যায়ের পরিদর্শন দেশের প্রধান রাজনৈতিক নেতার নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রতি রাষ্ট্রের আন্তরিকতা ও সম্মানকে নির্দেশ করে।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সংকট ও চিকিৎসা
৮০ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর রাতে দ্রুত তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বর্তমানে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। মেডিকেল বোর্ডের দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা চলছে। পূর্ণ সুস্থতার জন্য তাঁর আরও সময় প্রয়োজন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সোমবার, চীনা ও ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দলও তাঁর চিকিৎসায় সহায়তার জন্য ঢাকায় পৌঁছেছেন। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের এই সম্মিলিত প্রয়াস তাঁর জীবনরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা নিশ্চিত করছে।
জিয়া পরিবারের সার্বক্ষণিক তদারকি
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার শুরু থেকেই তাঁর পরিবার এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। লন্ডন থেকে তাঁর বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান তাঁর শারীরিক অবস্থার সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন এবং মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করছেন।
এছাড়াও, হাসপাতালে খালেদা জিয়ার পাশেই রয়েছেন ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি। জিয়া পরিবারের এই সদস্যরা তাঁর চিকিৎসার অগ্রগতি নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং দ্রুত আরোগ্যের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তাৎপর্য
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই পরিদর্শন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মানবিকতা ও সহনশীলতার বার্তা দিয়েছে। ড. ইউনূস এবং খালেদা জিয়া রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন অবস্থানে থাকলেও, এই সাক্ষাৎ দেশের কঠিন সময়ে মানবিক বন্ধনকে তুলে ধরে।
সরকার ইতোমধ্যে খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (VIP) ঘোষণা করে এসএসএফের বিশেষ নিরাপত্তা দিয়েছে এবং তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর বিষয়েও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। সামরিক এবং বেসামরিক নেতৃত্বের এই ধারাবাহিক পরিদর্শন আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরে।
জাতীয় ঐক্যের বার্তা ও সুস্থতার জন্য অপেক্ষা
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এভারকেয়ার হাসপাতাল পরিদর্শন দেশের প্রধান রাজনৈতিক নেতার প্রতি রাষ্ট্রীয় সংবেদনশীলতার সর্বশেষ প্রকাশ। সামরিক নেতৃত্বের পর প্রধান উপদেষ্টার এই মানবিক পরিদর্শন দেশের জনগণকে একটি জাতীয় ঐক্যের বার্তা দিয়েছে। যদিও খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য আরও সময় প্রয়োজন, তবে তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন উদ্যোগ আসা তাঁর পরিবারের জন্য এক ধরনের স্বস্তি বয়ে এনেছে। তাঁর দ্রুত আরোগ্যের জন্য দেশবাসী এখন গভীর অপেক্ষায়।
এম আর এম – ২৪৮০, Signalbd.com



