অর্থনীতি

ঘুমধুমে স্থলবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের: নৌপরিবহন উপদেষ্টা

বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে একটি স্থলবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ঘুমধুম এলাকার সম্ভাব্য স্থলবন্দর নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করেছেন। তিনি ঘুমধুম সীমান্ত সড়ক এবং স্থলবন্দর নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন।

এ সময় তিনি জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে, যা বর্তমানে বজায় রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে। রোহিঙ্গা জনগণের যে অংশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করছে, সে কারণে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জরুরি। এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, “ভবিষ্যতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমাদের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে স্থল যোগাযোগ থাকতে হবে। তাই ঘুমধুমে স্থলবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।”

স্থলপথের সুবিধা এবং সরকারের পরিকল্পনা

নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে নৌপথের তুলনায় স্থলপথ ব্যবহার করা আরও সুবিধাজনক হবে। ঘুমধুম এবং টেকনাফ এলাকার মধ্যে একটি আন্তদেশীয় মহাসড়ক রয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে। এভাবে, ঘুমধুমে স্থলবন্দর নির্মাণ হলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্থল যোগাযোগ আরও সহজ এবং শক্তিশালী হবে।

এ সময় তিনি টেকনাফের বন্দরের সম্পর্কে কিছু তথ্যও দেন। তিনি বলেন, “টেকনাফে আমাদের একটি বন্দর রয়েছে, তবে এটি পুরোপুরি স্থলবন্দর নয়। আমরা এটিকে স্থলবন্দরে রূপান্তর করতে চাই। ভবিষ্যতে এটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকতে পারে।”

বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে সরকার দৃঢ়প্রতিবদ্ধ

উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন আরও জানান, তিনি কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানে মিয়ানমার থেকে পণ্য পরিবহনের বাণিজ্য পুনরায় সচল করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা চলছে। গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে পণ্যবাহী কার্গো বোট আটকে দেওয়ার কারণে সীমান্ত বাণিজ্য কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে ২৩ দিন ধরে ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ বন্দরে কোনো পণ্যবাহী বোট আসেনি। এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করছে, যাতে সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় সচল রাখা যায়।

স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সরকারের সহযোগিতা

ঘুমধুম এবং টেকনাফ এলাকায় স্থলবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সরকারের সাথে স্থানীয় প্রশাসনও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের সফরের সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মানজারুল মান্নান, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবদুল্লাহ ইয়ামিন এবং কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফারুক হোসেন খানসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এই কর্মকর্তারা সাথেসাথে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যা এবং অনিয়ম নিয়ে আলোচনা করেন।

টেকনাফ বন্দরের কার্যক্রম ও সমস্যাগুলি

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিদর্শনের সময়, বন্দরটির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর এবং সাদ্দাম হোসেন সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বন্দরের সমস্যা এবং অনিয়ম নিয়ে আলোচনা করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলোর সমাধান দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন এবং সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে নিশ্চিত করেন।

এছাড়া, তিনি জানান যে, বর্তমানে টেকনাফ বন্দরটি নৌপরিবহন বা সমুদ্রবন্দর হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে, কিন্তু ভবিষ্যতে এটি স্থলবন্দর হিসেবে রূপান্তরিত হতে পারে।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক

বাংলাদেশ-মিয়ানমার বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে, এবং ভবিষ্যতেও এটি অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ স্থলবন্দর নির্মাণের পর, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তবে, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সমস্যা মোকাবেলা করে সীমান্তের বাণিজ্য পুনরায় সচল রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এম সাখাওয়াত হোসেন এবং তার টিম এই সমস্যার সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করছে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

ঘুমধুম এবং টেকনাফ এলাকায় স্থলবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা শুধু যোগাযোগ এবং বাণিজ্য ব্যবস্থাকে সহজ করবে না, বরং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে স্থানীয় মানুষদের কর্মসংস্থান এবং উন্নতির সুযোগ তৈরি হবে।

এছাড়া, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে, এবং দুই দেশের মধ্যে স্থলপথে চলাচল সহজতর হবে, যা দীর্ঘমেয়াদী পারস্পরিক সুবিধার দিকে পরিচালিত করবে।

উপসংহার

এম সাখাওয়াত হোসেনের পরিদর্শন এবং সরকারের স্থলবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, তা শুধু টেকনাফ ও ঘুমধুম এলাকার উন্নয়ন নয়, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে অবাধ এবং সহজ যোগাযোগের ব্যবস্থা সৃষ্টি করবে। এর ফলে উভয় দেশের জন্য বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে এবং সীমান্তে অবস্থিত মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button