সিরিয়ায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক বিমান হামলা আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মার্কিন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, এই হামলা সিরিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করতে পারে এবং ইসরাইল–সিরিয়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনার সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। প্রতিবেদনে দুইজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে, যারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্বেগ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ায় ইসরাইলের ধারাবাহিক হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে শুধু সিরিয়া নয়, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও শান্তি বিপন্ন হতে পারে। এছাড়া তিনি ইসরাইলকে সিরিয়ার সঙ্গে শক্তিশালী ও সত্যিকারের সংলাপ বজায় রাখার আহ্বান জানান। ট্রাম্পের মতে, সিরিয়ার জনগণ তাদের দেশের উন্নয়নের সুযোগ পাবে যদি বিদেশি হস্তক্ষেপ রোধ করা যায়।
তিনি সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শরাআর প্রশংসা করেছেন। ট্রাম্প বলেন, আল-শরাআর দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন, যা অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি সংঘটিত হামলার ঘটনা
গত শুক্রবার দক্ষিণ সিরিয়ার বেইত জিন গ্রামে ইসরাইলি সামরিক অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে ১৩ জন সিরিয়ান নিহত এবং ছয় ইসরাইলি সৈন্য আহত হন। ঘটনাটি সিরিয়ার ভেতরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এক মার্কিন কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে জানান, “সিরিয়ানরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ায় জনগণ প্রতিশোধের দাবি জানাচ্ছে।”
হঠাৎ হামলার কারণে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, হোয়াইট হাউসকে ইসরাইল এই অভিযান সম্পর্কে পূর্বে অবহিত করেনি এবং সিরিয়ার সামরিক চ্যানেলেও কোনো সতর্কবার্তা পাঠানো হয়নি। এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, “সিরিয়া ইসরাইলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চায় না। এটি লেবাননের মতো পরিস্থিতি নয়। তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যেন সবকিছুই হুমকি মনে করছেন।”
অন্য একজন কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন, “ইসরাইলকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, এই ধরণের হামলা বন্ধ করতে হবে। না হলে তারা নিজেই একটি বড় কূটনৈতিক সুযোগ হারাবেন এবং সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের শিকার হবেন।”
ইসরাইলের হামলার পরিসংখ্যান
সিরিয়ার বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ইসরাইল সিরিয়ার ভূখণ্ডে ১,০০০–এর বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে। এছাড়াও সীমান্ত অতিক্রম করে ৪০০–এর বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে গোলান মালভূমির নিরস্ত্রীকৃত বাফার জোন দখল করে ইসরাইল ১৯৭৪ সালের চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
এই হামলাগুলোতে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তা বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, এমন ধরনের সামরিক অভিযান দীর্ঘমেয়াদে সিরিয়ার সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন করতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরাইলের সামরিক কর্মকাণ্ডের পরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মার্কিন প্রশাসন, সিরিয়ায় শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্ব আরোপ করছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বারবার ইসরাইলকে সতর্ক করেছেন যে, তাদের অনিয়মিত হামলা সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা এবং শান্তি বজায় রাখতে ইসরাইল ও সিরিয়ার মধ্যে সংলাপের গুরুত্ব অপরিসীম। যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়, যেখানে সামরিক উত্তেজনা নয়, কূটনৈতিক সমাধানই প্রাধান্য পাবে।
সিরিয়ার প্রতিক্রিয়া
সিরিয়ার সরকার ইসরাইলের বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইসরাইলের এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও সিরিয়া–ইসরাইল চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এটি সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের প্রতি স্পষ্ট হুমকি।”
সিরিয়ান জনগণও এই হামলার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদী মিছিল হয়েছে এবং মানুষ বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।
ইসরাইলের অবস্থান
ইসরাইল তার সামরিক অভিযানের পেছনে নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার কারণ উল্লেখ করেছে। দেশটির সেনারা বলেছে, হামলার লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও সীমান্তে হুমকি সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই ধরনের অভিযান সীমান্ত অতিক্রমের কারণে সিরিয়ার স্থিতিশীলতা বিপন্ন করছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
মার্কিন–ইসরাইল সম্পর্কের প্রভাব
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ইসরাইলের হামলা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র–ইসরাইল সম্পর্কেও চাপ পড়তে পারে। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসন চায়, ইসরাইলকে কূটনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে সহায়ক হতে হবে, না কি একপাশী সামরিক অভিযান চালাতে হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরাইলের অনিয়মিত হামলা শুধুমাত্র সিরিয়ার নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ভারসাম্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্বেগ মূলত শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধপ্রবণতা কমানোর জন্য।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
বিশ্ব রাজনীতিতে সিরিয়ার অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একতাবদ্ধতা প্রয়োজন। মার্কিন প্রশাসন বারবার ইসরাইলকে সতর্ক করেছে যে, হামলা বন্ধ না করলে এটি সিরিয়ার নতুন সরকারকে শত্রুতে পরিণত করবে এবং কূটনৈতিক সুযোগ নষ্ট করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসরাইল এবং সিরিয়ার মধ্যে সংলাপ পুনঃস্থাপন করতে না পারলে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক এবং সামরিক উত্তেজনা বাড়তে পারে। এটি শুধু দুই দেশের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য হুমকিস্বরূপ।
সিরিয়ায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলা কেবল একটি সামরিক ঘটনা নয়, এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতি, মানবাধিকার এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। মার্কিন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, এই হামলা সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে এবং ইসরাইল–সিরিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিশেষ করে মার্কিন প্রশাসন বারবার সতর্ক করেছে যে, উভয় দেশের মধ্যে সংলাপ বজায় রাখা জরুরি।
সিরিয়ার নতুন সরকার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ইসরাইলের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিনিয়ত মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে।
MAH – 14103 I Signalbd.com



