সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের দ্বিতীয় ধাপে ব্যাপক প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে মোট ৩ লাখ ৩৪ হাজার ১৫১টি আবেদন জমা পড়েছে, যেখানে শূন্য পদের সংখ্যা মাত্র ৪ হাজার ১৬৬। এ হিসেবে প্রতিটি শূন্য পদের জন্য লড়বেন ৮০ জনের বেশি প্রতিযোগী।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, এই ধাপের আবেদন গ্রহণের সময়সীমা ২৭ নভেম্বর শেষ হয়েছে, এবং সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যভাগে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বড় পরিসরে জনবল সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক আগ্রহ
প্রাথমিক শিক্ষায় দীর্ঘ সময়ের পর বড় পরিসরে শিক্ষক নিয়োগের এই উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রার্থী সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তীব্র প্রতিযোগিতা হবে।
১৩তম গ্রেডের এই পদে বেতনক্রম ১১,০০০ থেকে ২৬,৫৯০ টাকা। বেতন কাঠামো ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত।
এর আগে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপে (রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগ) ১০ হাজার ২১৯টি শূন্য পদের বিপরীতে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৯টি আবেদন জমা পড়েছিল, যেখানে প্রতি পদের জন্য ৭৩ জনের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
নিয়োগ বিধিমালার পরিবর্তন
চলতি বছরের ২৮ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করে। পরে কিছু সংশোধন আনা হয় এবং ২ নভেম্বর সংশোধিত বিধিমালা প্রকাশিত হয়।
সংশোধিত বিধিমালায় শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ‘অন্যান্য বিষয়ে’ শব্দের পরিবর্তে ‘বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে অন্তত’ শব্দগুচ্ছ সংযোজন করা হয়েছে। এর ফলে বিজ্ঞান বিভাগের প্রার্থীরা সরাসরি নিয়োগে অগ্রাধিকার পাবেন।
নতুন বিধিমালার মূল পয়েন্টগুলো হলো:
- সহকারী ও প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য প্রার্থীর কাছে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক/স্নাতক সম্মান ডিগ্রি থাকতে হবে।
- শিক্ষাজীবনে কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয়।
- আবেদনের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩২ বছর।
নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার কমিটি
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চেয়ারম্যান করে ৩১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে গঠন করা হয় আট সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ কমিটি।
কমিটিতে রয়েছেন:
- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি
- সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রতিনিধি
- উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর প্রতিনিধি
- প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা
কমিটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরিচালনা, সুপারিশ এবং নিয়ন্ত্রণ করবে।
প্রধান শিক্ষক পদে বড় পরিবর্তন
নতুন বিধিমালা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে:
- প্রধান শিক্ষক পদের ৮০% পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ হবে, বাকি ২০% সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে।
- পদোন্নতির জন্য সহকারী শিক্ষকদের অন্তত ১২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
- মৌলিক প্রশিক্ষণ ও চাকরি স্থায়ীকরণ সম্পন্ন হতে হবে।
এই পরিবর্তনের ফলে সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘকালীন অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা মূল্যায়ন করা হবে।
আবেদন ও প্রতিযোগিতার চিত্র
এই ধাপের ৩ লাখ ৩৪ হাজার ১৫১টি আবেদন এবং ৪ হাজার ১৬৬টি শূন্য পদ নির্দেশ করে যে, প্রতিটি পদে ৮০ জনের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রাথমি শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি একটি অতিপ্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ প্রক্রিয়া, যা দেশব্যাপী শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
প্রাথমিক শিক্ষায় বড় নিয়োগের গুরুত্ব
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত এবং দক্ষ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার চায়:
- শিক্ষার মান উন্নয়ন
- শূন্য পদের দ্রুত পূরণ
- বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষকদের প্রাধান্য
- অভিজ্ঞ শিক্ষকদের প্রমোশন এবং দক্ষতার মূল্যায়ন
বেতন ও অন্যান্য সুবিধা
- ১৩তম গ্রেড: বেতন ১১,০০০-২৬,৫৯০ টাকা
- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়মিত বেতন ও ভাতা প্রদান
- প্রার্থীরা সরকারি স্বাস্থ্যসুবিধা, পেনশন ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় থাকবেন
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা
বৃহৎ সংখ্যক আবেদনকারীর জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করবে।
- প্রত্যাশিত পরীক্ষা সময়: ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যভাগ
- পরীক্ষা পদ্ধতি: লিখিত ও মৌখিক
- নির্বাচিত প্রার্থীরা প্রশিক্ষণ ও ডেপ্লয়মেন্ট শেষে নিয়োগ পাবেন
সমালোচনা ও প্রত্যাশা
বেশ কিছু শিক্ষাবিদ মনে করেন, ৮০ জনের বেশি প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিছু ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে সরকারের পরিকল্পিত এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া এই সমস্যাগুলো কমাতে সাহায্য করবে।
শিক্ষাবিদরা আশা করছেন:
- নির্ধারিত বয়সসীমা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা মান নিশ্চিত হবে
- বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে
- দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উচ্চমানের শিক্ষকের মাধ্যমে উন্নত হবে
আগে অন্য বিভাগের নিয়োগের তুলনা
প্রথম ধাপে (রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ):
- শূন্য পদ: ১০,২১৯
- আবেদন: ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৯
- প্রতি পদের প্রতিযোগিতা: প্রায় ৭৩ জন
দ্বিতীয় ধাপে (ঢাকা ও চট্টগ্রাম):
- শূন্য পদ: ৪,১৬৬
- আবেদন: ৩ লাখ ৩৪ হাজার ১৫১
- প্রতি পদের প্রতিযোগিতা: ৮০+ জন
এ থেকে বোঝা যায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য প্রতিযোগিতা আরও তীব্র।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ
নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, শূন্য পদের পূরণ, এবং দক্ষ শিক্ষকের নিয়োগ নিশ্চিত করবে।
প্রার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা আশা করছেন যে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, পরিকল্পিত ও দক্ষ হবে।
MAH – 14099 I Signalbd.com



