পাবনা-৪ আসনে জামায়াত প্রার্থীর প্রচারণায় হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, বিএনপির প্রার্থী সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচনি মাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন, কিন্তু জামায়াত জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পিছিয়ে যাবে না।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে জামায়াত প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডলের নির্বাচনি প্রচারণায় দফায় দফায় হামলা, গুলিবর্ষণ ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার পর দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বিএনপির প্রার্থী বুলেটের ভয় দেখিয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চান। তিনি স্পষ্ট জানান, জামায়াত কোনো সন্ত্রাস, দমন-পীড়ন বা সহিংসতার কাছে মাথা নত করবে না।
ঘটনার বিবরণ ও ডা. শফিকুর রহমানের প্রতিক্রিয়া<
পাবনার ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়াগড়ি জগির মোড় এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলে জামায়াত প্রার্থীর প্রচারণায় আচমকা হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। এতে প্রার্থীসহ বহু কর্মী-সমর্থক আহত হন, ভাঙচুর করা হয় গাড়ি ও মোটরসাইকেল।
রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ঘটনাটি কোনো আকস্মিক সহিংসতা নয়; বরং তা পূর্বপরিকল্পিত। তার দাবি, বিএনপির দলীয় প্রার্থীর অসহিষ্ণু ও উস্কানিমূলক আচরণের ধারাবাহিক ফল হচ্ছে এই হামলা।
তিনি বলেন, প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, জনগণ এখন দেখতে চায় তারা এর বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়।
জামায়াতের অবস্থান: সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত নয়
বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, জামায়াত কোনো সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করবে না। তার ভাষ্যে, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
তিনি আরও জানান, দলটি শান্তিপূর্ণ প্রচারণায় বিশ্বাস করে এবং কারও উস্কানিতে প্রলুব্ধ হবে না। বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অক্ষুণ্ণ রাখতে তারা আরও সংগঠিতভাবে মাঠে থাকবে।
আগের দিনও ছিল উত্তেজনা
দলীয় সূত্রগুলোর দাবি, এই ঘটনার আগের দিনও একই এলাকায় জামায়াতের কর্মীদের ওপর বিএনপি সমর্থকদের হামলা হয়েছিল। স্থানীয় পর্যায়ে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার কারণে দুই দিনের মধ্যে ধারাবাহিক সংঘর্ষ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবারের সহিংসতা নির্বাচনি মাঠের পরিবেশ নষ্টের সংগঠিত প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের সরাসরি অবমাননা।
নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ
পাবনা-৪ আসনটি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে বিভিন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে উত্তেজনা নতুন নয়। তবে এবারের ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
আহতদের পরিবারের অভিযোগ, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ভোটগ্রহণের দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এদিকে নির্বাচনি পর্যবেক্ষক মহলও বলছে, এ ধরনের সহিংসতা ভোটারদের অংশগ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং সুষ্ঠু পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
রাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন মাত্রা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনি প্রচারণায় এমন সহিংসতা দেশের সামগ্রিক নির্বাচনি পরিবেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
তাদের মতে, প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর মধ্যে অস্থিরতা বাড়লে আগাম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দলগুলোর মধ্যকার অবিশ্বাস, মাঠ দখলের প্রতিযোগিতা এবং সমর্থকদের উগ্র আচরণ সহিংসতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তারা বলছেন, নির্বাচনি নিয়ম-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা জোরদার না হলে ভোটারদের আস্থা কমে যেতে পারে।
“জামায়াত কোনো সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করবে না। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই থামবে না।” — ডা. শফিকুর রহমান
পাবনা-৪ আসনের প্রচারণায় হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই ঘটনা শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নয়, সাধারণ ভোটারদেরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য নির্বাচনি মাঠে নতুন বার্তা দিয়েছে: সন্ত্রাসের মুখে পিছিয়ে যাবে না জামায়াত। তবে সবশেষে প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয় এবং কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে, সেটিই নির্ধারণ করবে আগামীর ঘটনার গতিপথ।
এম আর এম – ২৪০২,Signalbd.com



