পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্বাচনী প্রচারণাকালে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে তার গাড়ি ও সমর্থকদের শতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। আহত হয়েছেন বহু নেতা-কর্মী। ঘটনার পেছনে পূর্ববর্তী উত্তেজনা ও স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলের প্রচারণার সময় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থকদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় তালেব মন্ডলের গাড়ি এবং তার সমর্থকদের শতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। স্থানীয় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিস্তারিত বর্ণনা
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চর গড়াগড়ি এলাকায় প্রচারণা কর্মসূচি চলাকালে এই হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রচারণার মিছিল আলহাজ্ব মোড় এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ একটি সংঘবদ্ধ দল জামায়াতের নেতাকর্মী এবং মিছিলের গাড়িবহরের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা লাঠিসোটা, লোহার রডসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হামলায় অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলের গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন ও দরজার অংশ ভাঙচুর করা হয়। একই সঙ্গে তার সমর্থকদের মালিকানাধীন শতাধিক মোটরসাইকেল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক মোটরসাইকেল উল্টে ফেলা, কাচ ভাঙা ও ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয় বলে স্থানীয়রা জানান। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আগের ঘটনা ও উত্তেজনার কারণ
স্থানীয় সূত্র বলছে, দুই দিন আগে একই এলাকায় জামায়াতের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের উত্তেজনার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, সেদিন জামায়াতের কর্মীদের মারধর করা হয়। এই ঘটনার পর থেকেই এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। ফলে বৃহস্পতিবারের প্রচারণায় হামলা হওয়ার ঘটনাকে অনেকেই আগের ঘটনার ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন।
চর গড়গড়ি এলাকা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দলের সমর্থকদের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিযোগিতার মাঠ হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এই এলাকায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দুই পক্ষের প্রচারণা বাড়তে থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র হয়েছে।
আহতদের অবস্থা ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
হামলায় আহতদের সঠিক সংখ্যা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, অন্তত ৬০–৭০ জন বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছেন। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া কয়েকজন জানান, প্রচারণার মিছিলকে লক্ষ্য করে হঠাৎই হামলাকারীরা তেড়ে আসে এবং নিরস্ত্র কর্মীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়।
আহতদের পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের আগে এমন সহিংসতা সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর কারণ হতে পারে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রার্থীদের বক্তব্য ও অভিযোগ
অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল অভিযোগ করেন যে, তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল এবং শান্তিপূর্ণভাবেই তারা প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন। তার ভাষায়, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সঙ্গবদ্ধভাবে হামলা চালানো হয়েছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের প্রচারণাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তার সমর্থকদের মোটরসাইকেল ভাঙচুরের পাশাপাশি অনেককে গুরুতরভাবে আহত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ফলে হামলার অভিযোগ অস্বীকার বা স্বীকার — কোনোটিই তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে এবং উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তিনি বলেন, ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দোষীদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ জানায়, উভয় পক্ষের অভিযোগ তারা খতিয়ে দেখছে। এলাকার সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নির্বাচনের আগে সহিংসতার প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনের আগে এমন সহিংসতা ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় প্রার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
ঈশ্বরদীতে জামায়াত প্রার্থীর প্রচারণায় হামলার ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আহতদের চিকিৎসা চলছে এবং তদন্তও শুরু হয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের সহিংসতা যদি চলতে থাকে, তাহলে নির্বাচনী পরিবেশ আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এখন দেখার বিষয় হলো, তদন্তে কী উঠে আসে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এম আর এম – ২৪০১,Signalbd.com



