আঞ্চলিক

ঢাকায় এলাকাভিত্তিক বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে ডিএনসিসি: প্রশাসক

Advertisement

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক জানিয়েছেন, নতুন গাইডলাইনে এলাকাভিত্তিক সর্বোচ্চ ভাড়া, সেবার মান, হোল্ডিং ট্যাক্স ও ভাড়াটিয়া–বাড়িওয়ালা সম্পর্কের ন্যায্যতা নিশ্চিত করা হবে। ডিসেম্বরেই তৈরি হচ্ছে খসড়া, বাস্তবায়ন শুরু হতে পারে আগামী জানুয়ারিতে।

ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের মধ্যে অসন্তোষ, যুক্তি–পাল্টা যুক্তি এবং নানা ধরনের জটিলতা চলে আসছে। এ পরিস্থিতি নিরসনে এবার যুগান্তকারী এক উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তারা জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক বাড়ি ভাড়ার সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ করে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার অধিকার রক্ষায় একটি সমন্বিত গাইডলাইনও প্রস্তুত করা হচ্ছে।

ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই খসড়া নির্দেশিকা তৈরি হয়ে যাবে এবং আগামী জানুয়ারির মধ্যেই তা কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ডিএনসিসির নতুন ঘোষণা: এলাকাভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জানায়, শহরের প্রতিটি এলাকায় জীবনযাত্রা, পরিবেশ, সেবার মান, রাস্তা, বাজার ও নিরাপত্তার ভিত্তিতে বাড়িভাড়া নির্ধারণ করা হবে। কোন এলাকায় কী ধরনের বসবাসযোগ্য সুবিধা আছে এবং সেসব সুবিধার মান কেমন—এসব বিবেচনা করেই তৈরি করা হবে ডিএনসিসির রেটকার্ড।

প্রশাসক বলেন, কোন এলাকায় সর্বোচ্চ ভাড়া কত হতে পারে তার একটি স্বচ্ছ তালিকা প্রকাশ করা হবে। এর মাধ্যমে বাড়িওয়ালারা যেন ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াতে না পারেন, আর ভাড়াটিয়ারাও যেন ন্যায্য ভাড়ায় বাসা নিতে পারেন—এটাই মূল লক্ষ্য।

বছরজুড়ে ভাড়া বাড়ানো নিয়ে অসন্তোষ

ঢাকার ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও বাস্তবে তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ, অনেক বাড়িওয়ালা বছরে একাধিকবার ভাড়া বৃদ্ধি করেন, অথচ যুক্তিসংগত কোনো ব্যাখ্যা দেন না। অন্যদিকে, বাড়িওয়ালাদের দাবি, হোল্ডিং ট্যাক্স, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সেবার মান বজায় রাখতে তাদের অতিরিক্ত খরচ হয়, যা মোকাবেলা করতে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না।

ডিএনসিসি মনে করছে, এই অসামঞ্জস্য দূর করতে হলে ভাড়ার জন্য সুস্পষ্ট গাইডলাইন এবং বাধ্যতামূলক অনুসরণযোগ্য কাঠামো প্রয়োজন। তাই এবার তারা উদ্যোগ নিয়েছে নতুন নিয়মের মাধ্যমে ভাড়াটিয়া–বাড়িওয়ালা সম্পর্ককে আরও স্বচ্ছ করতে।

ভাড়াটিয়া–বাড়িওয়ালা সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা সভা

ডিএনসিসির নগর ভবনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের প্রতিনিধিরা সরাসরি মতামত তুলে ধরেন।
ভাড়াটিয়ারা জানান, অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়া নির্ধারণে স্বেচ্ছাচারিতা করেন এবং ছোটখাটো বিষয়েও ইচ্ছামতো নিয়ম চাপিয়ে দেন। অন্যদিকে, বাড়িওয়ালারা দাবি করেন, তারা হোল্ডিং ট্যাক্সসহ নিয়মিত খরচ ঠিকমতো দিলেও যথাযথ সুবিধা সব সময় পান না।

এই পরিস্থিতিতে প্রশাসক জানান, উভয় পক্ষের মতামত শোনার পরই তারা এমন একটি দলিল এবং গাইডলাইন তৈরি করবেন যা ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার পারস্পরিক সম্মান ও ন্যায়সংগত অধিকার নিশ্চিত করবে।

ভাড়ার চুক্তি: আসছে নতুন মানক ফরমেট

ডিএনসিসি জানিয়েছে, ভাড়াটিয়া–বাড়িওয়ালার মধ্যে চুক্তিপত্র নিয়ে অতীতের অভিজ্ঞতা খুব ভালো নয়। অনেক সময় চুক্তিতে প্রয়োজনীয় তথ্য থাকে না, থাকে অনেক অস্পষ্টতা। এবার এ সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন একটি মানসম্মত চুক্তিফরম তৈরি করে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।
এই মানক দলিলে ভাড়ার পরিমাণ, সময়সীমা, নিরাপত্তা জামানত, মেরামত–রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ–পানি–গ্যাস বিল, সেবার মানসহ সব বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।

হোল্ডিং ট্যাক্স: তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক

আলোচনায় উঠে আসে হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে অসামঞ্জস্যের বিষয়টিও। অনেকে অভিযোগ করেন, বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে যে হারে ভাড়া নেন, সে অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স জমা দেন না।
এ বিষয়ে প্রশাসক বলেন, ভবিষ্যতে ভাড়াটিয়ারা যেন জানতে পারেন তাদের বাড়িওয়ালা ঠিক কী পরিমাণ হোল্ডিং ট্যাক্স দেন—সে জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে ডিএনসিসি। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং ভাড়া নির্ধারণেও যুক্তিসঙ্গততা নিশ্চিত হবে।

সেবার মান ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন মানদণ্ড

ডিএনসিসির আসন্ন গাইডলাইনে সেবার মানকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশাসক বলেন, ভাড়া বাড়ির প্রতিটিতে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা, দুর্যোগ সহনীয় কাঠামো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বাসায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকলে বা বিল্ডিংয়ের মানক কাঠামো না থাকলে সে বাড়ি ভাড়া দেওয়া যাবে না—এমন নীতিও আসতে পারে।
এ ছাড়া, রেসিডেন্সিয়াল এলাকায় কমার্শিয়াল কার্যক্রম বন্ধ করার জন্যও কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।

ভাড়াটিয়া–বাড়িওয়ালা সম্পর্ক কি স্বচ্ছ হবে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিএনসিসি যদি নতুন এই গাইডলাইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে ঢাকার ভাড়া বাজারে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা আসবে। এলাকাভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণের মাধ্যমে ইচ্ছামতো ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ হবে, ভাড়াটিয়ারা ন্যায্য ভাড়ায় বাসা পাবেন এবং বাড়িওয়ালারাও স্পষ্ট নিয়ম মেনে ভাড়া নির্ধারণ করতে পারবেন।
তবে বাস্তবে এ আইন কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে বাস্তবায়নের কড়া তদারকি ও আইনি বাধ্যবাধকতার ওপর।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগ ঢাকার ভাড়া বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। এলাকাভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ, মানক চুক্তিপত্র, স্বচ্ছ হোল্ডিং ট্যাক্স ব্যবস্থা এবং সেবার মান নিশ্চিত করা—সব মিলিয়ে নতুন গাইডলাইন ভাড়াটিয়া–বাড়িওয়ালা সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। এখন অপেক্ষা—এই পরিকল্পনা বাস্তবে কতটা সফল হয় এবং ঢাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ কতটা লাঘব করতে পারে।

এম আর এম – ২৩৯৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button