আবহাওয়া

ইন্দোনেশিয়ায় ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

Advertisement

ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রার পশ্চিম উপকূলে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর, ২০২৫) সকাল ছয়টা ৩০ মিনিটে ৬.২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। জার্মানির জিএফজেড জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেসের (GFZ) বরাত দিয়ে জানা যায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল আচেহ প্রদেশের সিংকিল শহর থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভূমি পৃষ্ঠ থেকে কয়েক কিলোমিটার গভীরে।

ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া, জলবায়ু ও ভূ-পদার্থবিদ্যা সংস্থা (BMKG) জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পটি ৬.২ মাত্রার শক্তির। সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভূমিকম্পের ফলে কোনো সুনামির আশঙ্কা নেই।

ভূমিকম্পের প্রাথমিক প্রভাব

দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (BNPB) জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভূমিকম্পের সময় অনেক মানুষ আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ স্থানের দিকে ছুটেছে।
BNPB-এর মুখপাত্র আব্দুল মুহারি জানান, “ভূমিকম্পের ফলে আচেহ প্রদেশের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তবে কোনো বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ বা হতাহতের খবর এখনও পাওয়া যায়নি।”

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পের ইতিহাস

ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের মধ্যে একটি। এটি ‘রিং অফ ফায়ার’ বা অগ্নিপর্বতমালা অঞ্চলের অংশ। রিং অফ ফায়ারে প্রতি বছর শতাধিক ভূমিকম্প ঘটে। এর ফলে প্রায়শই সুনামি, ভূমিধস, এবং ভবন ধ্বসের ঘটনা ঘটতে পারে।

উত্তর সুমাত্রা অঞ্চলের আচেহ প্রদেশ বিশেষভাবে ভূমিকম্প ও সুনামির জন্য পরিচিত। ২০০৪ সালের Boxing Day-তে এই প্রদেশে ঘটে ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক সুনামি, যা প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছিল। সেই দুর্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় এখন শক্তিশালী সুনামি সতর্কতা ব্যবস্থা ও দুর্যোগ প্রশমন কাঠামো গড়ে উঠেছে।

স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

ভূমিকম্পের সময় আচেহ প্রদেশের সিংকিল, লোহা, বন্দর ও আশেপাশের এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ স্থানের দিকে ছুটেছে। স্থানীয় প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে।

BNPB-এর মুখপাত্র আব্দুল মুহারি আরও জানান, “আমরা জরুরি পরিষেবা ও উদ্ধারকর্মের জন্য প্রস্তুত। প্রাথমিকভাবে কোনো বড় ক্ষতি নেই, তবে আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।”

ভূমিকম্প নিরীক্ষণ ও সুনামি সতর্কতা

ইন্দোনেশিয়ার BMKG ২৪ ঘণ্টা সঞ্চালিত ভূমিকম্প নজরদারি ব্যবস্থা পরিচালনা করে। সংস্থা জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পটি সুনামির কারণ হবে না। তবে তারা স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলেছেন এবং ভূমিকম্পের পরে সম্ভাব্য aftershock বা ভূকম্পন সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, “৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প শক্তিশালী হলেও এটি সাধারণত আংশিক ক্ষতি ঘটায়। তবে এটি সুনামি উৎপন্ন করতে সক্ষম নয়।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সহায়তা

ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্পপ্রবণতা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবসময় উদ্বিগ্ন থাকে। বড় ভূমিকম্পের পরে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সহায়তার জন্য প্রস্তুত থাকে। তবে এই ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর না থাকায় তেমন কোনো আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন পড়েনি।

ভূমিকম্প ও মানুষের সচেতনতা

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পের ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে সরকার ও প্রশাসন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। ভূমিকম্পের সময় মানুষকে কিভাবে নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে হবে, কোন স্থানে আশ্রয় নেবে, এ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রচলিত আছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ইন্দোনেশিয়ার সরকারের পরিকল্পনা ভূমিকম্প ও সুনামির ঝুঁকি কমানোর দিকে কেন্দ্রীভূত। নতুন ভবন নির্মাণের সময় ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জরুরি সেবা, হাসপাতাল ও নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রের মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

বৃহৎ ভূমিকম্পের জন্য স্থানীয়দের দ্রুত প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি, ভ্রাম্যমাণ রেডিও ও সতর্কতা সিস্টেম গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের উদ্যোগ মানুষের জীবন রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রার এই ভূমিকম্প একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ঘটনা। যদিও এ থেকে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি, তবে এটি আবারও মনে করিয়ে দেয় যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি সচেতন থাকা জরুরি। সরকারের সতর্কতা, দুর্যোগ প্রশমন ব্যবস্থা এবং মানুষের প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

স্থানীয়রা এখন নিরাপদ স্থানে রয়েছে এবং প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাব্য রিপোর্ট সংগ্রহ করছে। সতর্কতা বজায় রেখে তারা প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।

MAH – 14016 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button