বাউলশিল্পীদের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘উগ্র ধর্মান্ধদের ন্যক্কারজনক কাণ্ড’ বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাউলরা বাংলাদেশের আবহমান গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং তাদের ওপর এই হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একই সঙ্গে তিনি রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র মানুষদের জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।
আজ বুধবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। বিএনপির মহাসচিব এই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান এবং বলেন, এই ধরনের ‘হিংসা-প্রতিহিংসার পথ বেছে নেওয়া’ কারও জন্যই শোভনীয় নয়। তিনি মনে করেন, উগ্র ধর্মান্ধদের লক্ষ্য হলো দেশের সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি নষ্ট করা। অন্যদিকে, কড়াইল বস্তির ঘটনাকে ‘দরিদ্র মানুষগুলোর জন্য চরম আঘাত’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাউলদের ওপর হামলার নিন্দা ও কারণ ব্যাখ্যা
বাউলদের ওপর হামলা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কঠোর নিন্দা এবং তার ব্যাখ্যা।
মির্জা ফখরুল বাউলদের ওপর হামলার ঘটনাটিকে ‘একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা’ এবং ‘উগ্র ধর্মান্ধদের কাজ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, তারা এর তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বাউলদের বাংলাদেশের ‘আবহমান গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি’ এবং সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন। তাদের কাজ হলো দেশের মাঠে-ঘাটে-প্রান্তরে গান গেয়ে বেড়ানো।
বিএনপি মহাসচিব মনে করেন, এই ধরনের হিংসা-প্রতিহিংসার পথ বেছে নেওয়া কোনো পক্ষের জন্যই কাম্য বা শোভনীয় নয়।
এই হামলার ঘটনার পেছনে প্রকৃত দায়ী কারা, তা খুঁজে বের করতে তিনি অবিলম্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান এবং একই সঙ্গে নিরসন দাবি করেন।
কড়াইল বস্তি অগ্নিকাণ্ড: দরিদ্রদের জন্য চরম আঘাত
কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ড নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও উদ্বেগ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকা শহরে অনেক বস্তি রয়েছে, যার মধ্যে কড়াইল বস্তি অন্যতম এবং সেখানে কয়েক হাজার দরিদ্র ও নিঃস্ব মানুষ বসবাস করে।
ব্যক্তিগত উদাহরণ: তিনি বস্তিবাসীর দুর্ভোগ তুলে ধরতে গিয়ে একটি ব্যক্তিগত উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, তার বাসায় যে মহিলা রান্না করেন, তার বাড়িটিও কড়াইল বস্তিতে ছিল এবং অগ্নিকাণ্ডে সেটি সম্পূর্ণ পুড়ে একদম নিঃশেষ হয়ে গেছে।
চরম আঘাত: এই অগ্নিকাণ্ডকে তিনি ‘দরিদ্র মানুষগুলোর জন্য চরম আঘাত’ হিসেবে আখ্যা দেন এবং তাদের দুর্দশা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি: বিএনপির এই শীর্ষ নেতা সরকারের কাছে জোর দাবি জানান যে, সরকার যেন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও কাঠামোগত দুর্বলতা
গার্মেন্টস ও কারখানায় বারবার অগ্নিকাণ্ডের জন্য মির্জা ফখরুলের বিশ্লেষণ।
ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা নাকচ: সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা নাকচ করে দেন। তিনি মনে করেন, এটি আমাদের দুর্ভাগ্যক্রমে ঘটছে।
প্রধান কারণ: তিনি এই দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত কাঠামোগত দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন।
দায়িত্বপ্রাপ্তদের নেগলিজেন্স: তার মতে, বিশেষ করে গার্মেন্টস অথবা ফ্যাক্টরি-কারখানাগুলোতে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নেগলিজেন্স (অবহেলা) একটি বড় কারণ।
অপর্যাপ্ততা ও আইন অমান্য: অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা এবং আইন না মেনে চলা—সবকিছু মিলেই এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে বলে তিনি মনে করেন।
আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ
অগ্নিকাণ্ড ও হামলার মতো ঘটনা এড়াতে মির্জা ফখরুলের পরামর্শ।
আইনের প্রয়োগ: মির্জা ফখরুল মত দেন যে, যদি সত্যিকার অর্থেই আইনের প্রয়োগ হয়, তাহলে এই ধরনের দুর্ঘটনাগুলো অনেক কমে আসবে।
যথাযথ ব্যবস্থা: তিনি মনে করেন, যদি যথাযথ অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকে এবং আইন কঠোরভাবে মানা হয়, তবে এসব দুর্ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করা বা এড়িয়ে যাওয়া (Avoid) অনেক সহজ হবে।
অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা: বাউলদের ওপর হামলা এবং কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বের করে যদি কোনো ব্যক্তি দায়ী হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর :
“বাউলদের ওপর হামলা, এটা উগ্র ধর্মান্ধদের হামলা বলে আমি মনে করি। আমরা অবশ্যই এটার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করি এবং নিরসন দাবি করি।”
সংস্কৃতি, নিরাপত্তা ও দায়িত্বশীলতা
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই বক্তব্য সমাজের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাকে তুলে ধরে। প্রথমত, বাউলদের ওপর হামলা বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতিতে উগ্রপন্থার আক্রমণকে চিহ্নিত করে, যা দেশের সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির জন্য মারাত্মক হুমকি। দ্বিতীয়ত, কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ড রাজধানীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অসহায়তা ও ঝুঁকির চিত্র তুলে ধরে।
মির্জা ফখরুলের দাবি অনুযায়ী, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত হবে—বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় উগ্র ধর্মান্ধদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে সাংস্কৃতিক সহনশীলতা বজায় থাকে। পাশাপাশি, কড়াইল বস্তির ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি গার্মেন্টস ও বস্তি এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা। কেবল দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের অবহেলা দূর করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং কাঠামোগত দুর্বলতাগুলো দূর করা গেলেই এই ধরনের দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
এম আর এম – ২৩৮৯,Signalbd.com



