শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ: ৭ লাখ আবেদন, প্রতি পদে ৭৩ জন

Advertisement

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য সম্প্রতি সম্পন্ন আবেদনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই পদে মোট ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৯টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মোট শূন্য পদ দেখানো হয়েছিল ১০ হাজার ২১৯টি, যার ফলে প্রতিটি পদের জন্য গড়ে ৭৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

নির্দিষ্টভাবে বলা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নতুন জনবল নিয়োগের এই উদ্যোগটি শিক্ষাক্ষেত্রে এক বড় ধাপ। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, লিখিত পরীক্ষা সম্ভবত ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

আবেদন প্রক্রিয়া ও প্রতিযোগিতার পরিসংখ্যান

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন গ্রহণের শেষ সময় ছিল ২১ নভেম্বর ২০২৫। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আবেদনপত্রের সংখ্যা ছিল অসাধারণ— ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৯টি

প্রত্যেকটি পদে গড়ে ৭৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এটি প্রমাণ করে যে, সরকারি শিক্ষক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা দেশে কতোটা প্রবল। শিক্ষাক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে এই নিয়োগের প্রতি আগ্রহ ও সাড়া নজরকাড়া।

শিক্ষাবিভাগে নিয়োগের ধাপ

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রথম ধাপে রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের শূন্য পদে আবেদন আহ্বান করেছে। অন্যান্য বিভাগের শূন্য পদ পরবর্তী ধাপে অন্তর্ভুক্ত হবে।

এর আগে ২৮ আগস্ট ২০২৫-এ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’ প্রজ্ঞাপন করেছিল। তিন দিনের মধ্যে গঠন করা হয় আট সদস্যের কেন্দ্রীয় নিয়োগ কমিটি, যার চেয়ারম্যান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। কমিটিতে মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো ও সরকারি কর্ম কমিশনের প্রতিনিধিরাও যুক্ত রয়েছেন।

বিধিমালায় পরিবর্তন ও সংশোধন

প্রথম প্রজ্ঞাপনের পরে কিছু ত্রুটি থাকার কারণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব ঘটে। পরে মন্ত্রণালয় ২ নভেম্বর নতুনভাবে বিধিমালা প্রকাশ করে।

নতুন বিধিমালায় ‘অন্যান্য বিষয়ে’ শব্দের পরিবর্তে সংযোজন করা হয়েছে ‘বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে অন্তত’, যার ফলে বিজ্ঞান বিষয়ে প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই পরিবর্তন শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা এবং প্রতিযোগিতার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।

পদোন্নতি ও সরাসরি নিয়োগের নিয়ম

নতুন বিধিমালায় পদোন্নতি এবং সরাসরি নিয়োগের নিয়মেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদে ৮০ শতাংশ নিয়োগ হবে পদোন্নতির মাধ্যমে, বাকি ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে

পদোন্নতির ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কমপক্ষে ১২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা, মৌলিক প্রশিক্ষণ ও চাকরির স্থায়ীকরণ আবশ্যক। অন্যদিকে সহকারী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক—উভয় পদের সরাসরি নিয়োগে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি বাধ্যতামূলক।

শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ বা সমমানের ফল গ্রহণযোগ্য নয়। সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

লিখিত পরীক্ষা ও পরবর্তী ধাপ

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, আবেদন যাচাই-বাছাই শেষ হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষা ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে হতে পারে। লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করা হবে। এর পর প্রার্থীকে সাক্ষাৎকার ও প্রার্থী যাচাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে।

সরকারি শিক্ষক হওয়ার আগ্রহ ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার আগ্রহ প্রতিবারই প্রচুর। এটি কেবল চাকরি পাওয়া নয়, বরং শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের মান উন্নয়নের সুযোগও। প্রতিযোগিতার সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়াও কঠোর।

প্রতিযোগিতার এই প্রবল চাপ প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি শিক্ষক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা কতটা প্রবল। শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়ন এবং প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে এই নিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

কীভাবে আবেদন যাচাই করা হয়

আবেদন যাচাই প্রক্রিয়ায় প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স, অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য যাচাই করা হয়। ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই প্রার্থীদের জন্য সঠিক তথ্য প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি।

লিখিত পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় যোগ্যতা যাচাই করা হবে।

সারসংক্ষেপ

  • শূন্য পদ: ১০,২১৯টি
  • মোট আবেদন: ৭,৪৫,৯২৯টি
  • গড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী: প্রতি পদে ৭৩ জন
  • লিখিত পরীক্ষা: ২০২৬ সালের জানুয়ারি
  • বয়সসীমা (সরাসরি নিয়োগ): ৩২ বছর
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক/সম্মান ডিগ্রি

এই নিয়োগ প্রক্রিয়া দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি বড় পদক্ষেপ। নতুন শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের মানসিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

MAH – 14003 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button