মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পণ্য কিনতে সম্মত হয়েছেন। এটি সোমবার ট্রাম্পের ফোনালাপের একদিন পর জানা গেছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ট্রাম্প মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, “আমি শি জিনপিংকে বলেছি, আমি চাই আপনি আরও বেশি মার্কিন পণ্য কিনুন। তিনি তা করতে রাজি হয়েছেন।”
এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বাজারে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কৃষি পণ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের রপ্তানি ক্ষেত্রে এই চুক্তি দুটি দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
চীনের মার্কিন পণ্য কেনার নতুন পরিকল্পনা
গত মাসে বেইজিং সরকার ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা পুনরায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি শুরু করবে। একইসঙ্গে, কিছু বিরল খনিজ সম্পদ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেন, “চীন এই বছর মার্কিন কৃষকদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন কিনবে। এটি মার্কিন কৃষি খাতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।”
মার্কিন কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীন ইতিমধ্যেই প্রায় দুই মিলিয়ন মেট্রিক টন সয়াবিনের অর্ডার দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অর্ডার কৃষি খাতের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলবে এবং আমেরিকার কৃষকদের আয় বাড়াতে সাহায্য করবে।
শি জিনপিং ও ট্রাম্পের ফোনালাপ
চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, ফোনালাপে ট্রাম্পকে শি জিনপিং বলেছেন, “চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একসময় ফ্যাসিবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল রক্ষার জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।”
শি আরও বলেন, “চীনে তাইওয়ানের প্রত্যাবর্তন যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। চীন তাইওয়ানকে তার ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং চীনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সঙ্গে জড়িত।”
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় চীনের বিভিন্ন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়। এর ফলে, কৃষক এবং বিভিন্ন শিল্প খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
কিন্তু এখন শি জিনপিংয়ের সঙ্গে এই আলোচনার পর চীনের মার্কিন পণ্য কেনার অগ্রগতি বাজারে ইতিবাচক সঙ্কেত দিচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি পণ্য, সয়াবিন, ভুট্টা, গম, গবাদি পশুর খাদ্য এবং প্রযুক্তি পণ্য ক্রমবর্ধমানভাবে আমদানির জন্য আলোচনায় রয়েছে।
মার্কিন কৃষি খাতে প্রভাব
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের এই চুক্তি মার্কিন কৃষকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে। গত কয়েক বছরে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের সমস্যার কারণে অনেক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছিল।
- সয়াবিন: চীনের বড় অর্ডার কৃষকদের জন্য স্থিতিশীল আয় নিশ্চিত করবে।
- গম ও ভুট্টা: আমদানির চাহিদা বৃদ্ধি পেলে মার্কিন বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে।
- প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ: চীনের চাহিদা মার্কিন প্রযুক্তি খাতকে আরও শক্তিশালী করবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
চীনের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন: চীনের মার্কিন পণ্য কেনার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করবে।
- এশিয়ার বাজার: চীনের ক্রয় বাড়ানোর ফলে এশিয়ার কৃষি ও শিল্প বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
- বিশ্বব্যাংক ও IMF: তারা আশা প্রকাশ করেছে যে এই চুক্তি বিশ্বের অর্থনীতিতে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করবে।
মার্কিন-চীনা সম্পর্কের ভবিষ্যত
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প এবং শি জিনপিংয়ের আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে।
- বাণিজ্য বৃদ্ধি: মার্কিন পণ্য চীনে বেশি বিক্রি হবে।
- কৃষি খাতের উন্নয়ন: কৃষকরা দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা পাবেন।
- রাজনৈতিক সমঝোতা: আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কৌশলগত সমঝোতার সুযোগ তৈরি হবে।
বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে, চীনের এই পদক্ষেপ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের “আমেরিকা প্রথম” নীতিকে সহায়তা করবে এবং দুই দেশের মধ্যকার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর দিকনির্দেশনা দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেবে। কৃষি খাত, প্রযুক্তি খাত, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্পের এই উদ্যোগ মার্কিন পণ্য আমদানিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। বিশেষ করে সয়াবিন ও অন্যান্য কৃষি পণ্য মার্কিন বাজারের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
MAH – 14001 I Signalbd.com



