রাজনীতি

মানুষ যেমন কবর থেকে ফেরে না, হাসিনাও রাজনীতিতে ফিরবে না

Advertisement

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে দশটার দিকে, ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মধ্যবাজারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জনসভায় বক্তব্য রাখেন আমীর মাওলানা মামুনুল হক। তাঁর বক্তব্য ছিল অত্যন্ত তীব্র এবং বিতর্কিত। তিনি বলেন:

“মানুষ যেমন কবর থেকে ফেরে না, ঠিক তেমনই শেখ হাসিনা আর কখনো বাংলার রাজনীতিতে ফিরবেন না।”

এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। তবে এটি শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়; তিনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক রূপচিন্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।

মাওলানা মামুনুল হকের বক্তব্যের মূল বক্তব্য

  • তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান রাজনীতিতে একদলীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত শেখ হাসিনার আর কোনো প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়।
  • তাঁর ভাষায়, “আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি দলকে ধ্বংস করে, শেখ হাসিনা তার সাওয়াল‑জবাব নিয়ে ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন বগলদাবা করে বিদেশে চলে গেছেন।” অর্থাৎ তিনি দাবি করছেন, সম্পদ এবং ক্ষমতা আত্মীয়দের হাতে চলে গেছে।
  • তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি সতর্ক করেছেন যে, ভবিষ্যতে হাসিনাকে রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য ভাবা উচিত নয়, এমন প্রত্যাবর্তনের “দুঃস্বপ্নেও” তাদের দেখা উচিত নয়।
  • পাশাপাশি, তিনি তাঁর সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন নতুন বাংলাদেশের জন্য নতুন রাজনৈতিক আদর্শ গঠনের কাজে সক্রিয় হওয়ার।

“জুলাই” প্রসঙ্গ — নতুন রাজনৈতিক রূপচিন্তার অংশ

মাওলানা মামুনুল হকের বক্তব্য কেবল ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়; এটি একটি বিস্তৃত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে যুক্ত। তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলছেন, আগামী বাংলাদেশের জন্য শুধু পুরনো দল বা পুরনো নেতৃত্ত্ব নয়, একটি নতুন নৈতিক ও সাংগঠনিক ভিত্তি দরকার।

জুলাই সনদ (July Charter) প্রয়োজনীয়তা

  • তিনি দাবি করেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে নতুনভাবে গঠনের জন্য একটি নতুন সংবিধান বা রূপনির্ধারণ প্রয়োজন।
  • যারা জুলাই সনদের আন্দোলনে অংশ নেননি, তাদের সঙ্গে কখনো বোঝাপড়া নেই। আন্দোলনের চেতনাকে বাইপাস করলে তা গর্ভে রাজপথে নতুন আন্দোলন তৈরি করতে পারে।
  • তাঁর মতে, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান দেশকে রাজনৈতিক বদলের দিকে ঠেলে দিয়েছে, পাশাপাশি একটি নতুন নৈতিক ও ধারাভিত্তিক রাজনৈতিক কাঠামো চাহিদা করেছে।

আগামী নির্বাচন ও জনপ্রতিনিধিত্ব

  • মামুনুল হকের বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য যদি পুরনো দলগুলোর অংশগ্রহণ দেওয়া হয়, তবে সেটি হবে পুরনো রাজনীতির পুনরাবৃত্তি।
  • পরিবর্তে, জুলাই সনদের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক দল, নতুন নেতৃত্ব এবং নতুন নৈতিক ভিত্তির ওপর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবে।

প্রেক্ষাপট: কেন এই সময়ে এই দাবি?

  • গত ২০২৫ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ ও নতুন নির্দেশনার দাবি তীব্র করেছে।
  • রাজনৈতিক দলগুলোর পুরনো গঠন ও পুরনো শাসক‑পরিবারের প্রতি জনগণের মধ্যে বিশ্বাস হারানো।
  • দলীয় বিরোধ, ক্ষমতার ঘাটতি, স্বৈরাচারীর অভিযোগ — সব মিলিয়ে নতুন পথ খোঁজার প্রয়োজনীয়তা।
  • সেই কারণে “জুলাই সনদ” গ্রাহ্যতা পেয়েছে, বিশেষ করে যারা পুরনো রাজনীতির পুনরাবৃত্তি চায় না।

সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক গুরুত্ব

  1. রাজনৈতিক উত্তেজনা — এই ধরনের বক্তৃতা বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে এবং পুরনো নেতা ও দলগুলোর সমালোচনা বাড়াতে পারে।
  2. নতুন রাজনৈতিক ধারা — জুলাই সনদ এবং নতুন রাজনৈতিক চেতনার ভিত্তিতে নতুন দল, নতুন নেতৃত্ব ও নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে।
  3. ভবিষ্যৎ নির্বাচনে প্রভাব — আগামী নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে, পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হবে।
  4. সামাজিক ও সাংগঠনিক প্রভাব — ধর্মীয় ভিত্তির রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থ, জনগণের মধ্যকার বিশ্বাস এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর জনমত পরিবর্তিত হতে পারে।

সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ

  • কিছু বিশ্লেষক বলছেন, জুলাই সনদ বা নতুন চেতনা আকর্ষণীয় হলেও বাস্তবায়নযোগ্য নয়, কারণ পুরনো রাজনৈতিক দল, ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক শ্রেণি সহজে পালটানো যায় না।
  • প্রশ্ন উঠেছে, নতুন রাজনৈতিক রূপনির্ধারণ কি সফল হবে, যখন পুরনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও সামাজিক শ্রেণি একই থাকবে?
  • তীব্র ভাষার ব্যবহার — যেখানে পুরনো নেতাকে রাজনৈতিকভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে — গণতন্ত্রের স্বার্থে কতটা গ্রহণযোগ্য?

মাওলানা মামুনুল হকের বক্তব্য এবং “জুলাই সনদ”-এর ওপর ভিত্তি করে নতুন রাজনৈতিক ধারার প্রস্তাব শুধু এক ব্যক্তির দাবি নয়; এটি বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের আভাস।

“মানুষ যেমন কবর থেকে ফেরে না…” — এই বক্তব্য ব্যক্তিগত তিক্ততা বা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণই প্রকাশ করেছে না, বরং একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক চেতনার প্রতিফলন: পুরনো রাজনৈতিক দল, পুরনো নেতৃত্ত্ব এবং পুরনো ক্ষমতা থেকে একটি নতুন, ন্যায়ভিত্তিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠনের দাবি।

বাংলার জন্য, এই দাবির বিতর্ক যতই তীব্র হোক, এটি রাজনৈতিক আলোচনার সূচনা এবং আগামী দিনে নির্বাচনে, সংবিধান প্রণয়ন ও নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

MAH – 13997 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button