আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক সূচি ঘোষণা করেছে। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় যৌথভাবে আয়োজিত এই বৈশ্বিক আসরের পর্দা উঠবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি, আর ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ৮ মার্চ। মোট ২০টি দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টে গ্রুপ ‘সি’-তে পড়েছে বাংলাদেশ, যেখানে তাদের মোকাবিলা করতে হবে শক্তিশালী ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর মতো সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলগুলোর সঙ্গে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ভারতের মুম্বাইয়ে এক জমকালো অনুষ্ঠানে আইসিসি এই সূচি প্রকাশ করে। লিটন দাস, তাসকিন আহমেদদের নিয়ে গড়া টাইগাররা তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করবে টুর্নামেন্টের প্রথম দিন, ৭ ফেব্রুয়ারি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। বাংলাদেশের গ্রুপ পর্বের সবকটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে, যা বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য বড় সুবিধা নিয়ে এসেছে। এবার টাইগারদের সামনে কঠিন গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার চ্যালেঞ্জ।
গ্রুপ বিন্যাস এবং বাংলাদেশের অবস্থান
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ বিন্যাস কেমন এবং বাংলাদেশের জন্য গ্রুপ ‘সি’ কতটা কঠিন হতে পারে তার বিশ্লেষণ।
গ্রুপ এ: ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, নামিবিয়া
গ্রুপ বি: শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, ওমান
গ্রুপ সি: ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, নেপাল, ইতালি
গ্রুপ ডি: নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত
- মোট দল ও গ্রুপ সংখ্যা: এবারের আসরে মোট ২০টি দল অংশ নিচ্ছে, যাদের চারটি গ্রুপে (এ, বি, সি, ডি) ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে রয়েছে ৫টি করে দল।
- বাংলাদেশের গ্রুপ ‘সি’: বাংলাদেশ রয়েছে গ্রুপ ‘সি’-তে। এই গ্রুপের অন্য দলগুলো হলো: ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নেপাল ও ইতালি।
- কঠিন চ্যালেঞ্জ: গ্রুপ ‘সি’-কে টুর্নামেন্টের অন্যতম কঠিন গ্রুপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ উভয় দলই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অভিজ্ঞতা রাখে। এই দুই দলের সঙ্গে লড়াই করে গ্রুপ পর্ব পেরোনো বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
- কোয়ার্টার ফাইনালের পথ: গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুই দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পাবে।
এক নজরে বাংলাদেশের ম্যাচ সূচি
তারিখ, সময় এবং প্রতিপক্ষের ভিত্তিতে বাংলাদেশের গ্রুপ পর্বের পূর্ণাঙ্গ সূচি।
| তারিখ | প্রতিপক্ষ | ভেন্যু | সময় (বাংলাদেশ সময়) |
| ৭ ফেব্রুয়ারি | বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ | কলকাতা | বিকাল ৩:৩০ টা |
| ৯ ফেব্রুয়ারি | বাংলাদেশ বনাম ইতালি | কলকাতা | বেলা ১১:৩০ টা |
| ১৪ ফেব্রুয়ারি | বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড | কলকাতা | বিকাল ৩:৩০ টা |
| ১৭ ফেব্রুয়ারি | বাংলাদেশ বনাম নেপাল | কলকাতা | সন্ধ্যা ৭:৩০ টা |
গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ভেন্যু সুবিধা
বাংলাদেশের ম্যাচগুলোর ভেন্যু এবং গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোর বিশ্লেষণ।
ঘরের মাঠের সুবিধা: বাংলাদেশের গ্রুপ পর্বের সবকটি ম্যাচই ভারতের ক্রিকেটের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ভেন্যু কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই ভেন্যু বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এবং এখানকার পরিবেশ বাংলাদেশের উইকেটগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় টাইগাররা ‘ঘরের মাঠের সুবিধা’ পেতে পারে। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি সমর্থকের উপস্থিতি বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাবে।
শক্তিশালী প্রতিপক্ষ: বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচগুলো হবে ৭ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এই দুই ম্যাচেই জয় বা ভালো ফল গ্রুপ পর্ব পেরোনোর জন্য অত্যন্ত জরুরি।
ছোট দল বনাম লড়াই: ৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা ইতালি এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি এশিয়ার প্রতিপক্ষ নেপালের বিরুদ্ধে ম্যাচগুলোতে জয় নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য সহজ লক্ষ্য হবে।
বাংলাদেশের সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা কী কী হতে পারে।
সুযোগ: গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের সব ম্যাচ কলকাতায় হওয়ায় উইকেটের আচরণ এবং সমর্থকদের উপস্থিতি টাইগারদের পক্ষে যেতে পারে। উপমহাদেশের স্পিন-সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশের স্পিনাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
চ্যালেঞ্জ: ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট দলের সঙ্গে লড়াইয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং গভীরতা এবং পাওয়ারপ্লেতে আগ্রাসী খেলার দক্ষতা মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ধারাবাহিকতার অভাব কাটিয়ে ওঠা টাইগারদের জন্য অপরিহার্য।
তারুণ্যের শক্তি: দলে থাকা তরুণ খেলোয়াড়দের পারফর্মেন্স এবং অভিজ্ঞদের সঠিক সময়ে জ্বলে ওঠা এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। লিটন দাস, তাসকিন আহমেদ, এবং রিশাদ হোসেনদের মতো ক্রিকেটাররা এই বছর ভালো ফর্মে আছেন।
বিশেষজ্ঞ মতামত : “কলকাতায় বাংলাদেশের সব ম্যাচ হওয়াটা এক ধরনের বোনাস। এখানকার উইকেট এবং সমর্থনের সুবিধা নিয়ে যদি তারা ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অন্তত একটি করে ম্যাচে হারাতে পারে, তবে কোয়ার্টার ফাইনালের পথ তৈরি হবে।”
প্রত্যাশার পারদ উঁচুতে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পূর্ণাঙ্গ সূচি প্রকাশের পর ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। বাংলাদেশের গ্রুপ ‘সি’ কঠিন হলেও, কলকাতার ভেন্যু সুবিধা এবং দলের সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স আশা জাগাচ্ছে। ৭ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের যে বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে, তা যেন হয় সফলতার। ক্রিকেট ভক্তরা আশা করছেন, অতীতের ভুল শুধরে এবার টাইগাররা বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়ে নকআউট পর্বে জায়গা করে নেবে। এখন দেখার পালা, লিটন-তাসকিনরা এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের জন্য কতটা গৌরব বয়ে আনতে পারেন।
এম আর এম – ২৩৮০,Signalbd.com



