বিশ্ব

ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তিতে সম্মত ইউক্রেন

Advertisement

রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় একটি শান্তি চুক্তিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে ইউক্রেন। এক উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এমনটাই দাবি করেছে। ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া শান্তি পরিকল্পনার শর্তগুলোতে রাজি হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকের পর। প্রতিবেদনে জানানো হয়, মার্কিন সেনা সচিব ড্যান ড্রিসকল সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে আবুধাবিতে রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মার্কিন কর্মকর্তা এবিসি নিউজকে বলেছেন, “কিছু ছোটখাটো বিষয় সমাধানের বাকি আছে। তবে তারা একটি শান্তি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।” ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল আমাদের কথা শুনছে”, যার পরই এই চুক্তির খবর এলো।

আবুধাবিতে গোপন বৈঠক ও শান্তি প্রস্তাবের অগ্রগতি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্য নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে সরাসরি আলোচনার ব্যবস্থা করে যুক্তরাষ্ট্র।

গোপন বৈঠকের আয়োজন: ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলমান যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান এবং রুশ প্রতিনিধিদলের মধ্যে সরাসরি আলোচনার জন্য আবুধাবিতে একটি গোপন বৈঠক আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন সেনা সচিবের অংশগ্রহণ: বৈঠকের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ নভেম্বর) আবুধাবিতে পৌঁছান মার্কিন সেনা সচিব ড্যান ড্রিসকল এবং তিনি রাতেই রুশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন, যা মঙ্গলবারও অব্যাহত থাকার কথা।

দারুণ অগ্রগতি: এর আগে গত সপ্তাহে ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব নিয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপের নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় ‘দারুণ অগ্রগতি’ হয়েছে, যদিও তিনি স্বীকার করেন ‘এখনও কিছু কাজ করার বাকি আছে’।

২৮ দফা শান্তি প্রস্তাবের শর্ত ও প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এই ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাবই যুদ্ধের অবসানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।

প্রস্তাব পেশ: গত বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র এই ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাবটি ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়। এই প্রস্তাবগুলো জেনেভার বৈঠকে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল।

ইউক্রেনের সম্মতি: মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল এই শান্তি পরিকল্পনার মূল শর্তগুলোতে রাজি হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, দীর্ঘদিনের যুদ্ধ এবং ক্ষতির পর ইউক্রেন একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তির দিকে ঝুঁকছে।

রাশিয়ার স্বাগত: এই প্রস্তাব নিয়ে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা কিছু শর্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, রাশিয়ার পক্ষ থেকে তা স্বাগত জানানো হয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষ থেকেও এই প্রস্তাবগুলোকে সমাধানের একটি ‘ভিত্তি’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার ভূমিকা

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মধ্যস্থতার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন।

জেলেনস্কির ইঙ্গিত: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাম্প্রতিক সময়ে বলেছিলেন, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে “প্রেসিডেন্ট (ডনাল্ড) ট্রাম্পের দল আমাদের কথা শুনছে।” এই চুক্তির খবরে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য: ট্রাম্পের দল এই শান্তি প্রক্রিয়ায় নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তাদের প্রভাব এবং সক্ষমতা প্রমাণ করতে চাইছে। এটি তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার অংশ হতে পারে।

আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি: ট্রাম্পের পক্ষ থেকে নেওয়া এই উদ্যোগটি এমন এক সময়ে এলো, যখন দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসনে কোনো পক্ষই সামরিকভাবে সুস্পষ্ট সুবিধা পাচ্ছিল না।

পূর্বপটভূমি: তিন বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে।

দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত: রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এই যুদ্ধ চলছে, যাতে ইউক্রেনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থনীতিও এই যুদ্ধের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আগের আলোচনা ব্যর্থ: এর আগেও বেশ কয়েকবার দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।

মার্কিন সমর্থন: যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছিল। তবে এই শান্তি প্রস্তাবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবার যুদ্ধ বন্ধের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।

মার্কিন কর্মকর্তা (কোট): “কিছু ছোটখাটো বিষয় সমাধানের বাকি আছে। তবে তারা একটি শান্তি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।”

ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্বেগ এবং পরবর্তী পদক্ষেপ

শান্তি চুক্তিতে ইউক্রেনের সম্মতি আসলেও ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে।

শর্তাবলী নিয়ে উদ্বেগ: ফাঁস হওয়া প্রস্তাবের শর্তগুলো নিয়ে ইউক্রেনের পাশাপাশি তার ইউরোপীয় মিত্ররাও কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, চুক্তির শর্তাবলী, বিশেষত সীমান্ত নির্ধারণ এবং রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল নিয়ে তাদের আপত্তি থাকতে পারে।

সামরিক হামলা: শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে জোর আলোচনার মধ্যেই ইউক্রেনে রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ আরও বাড়ছে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শান্তি আলোচনাকে ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ভবিষ্যৎ আলোচনার পথ: ইউক্রেনের নীতিগত সম্মতির পর, এখন চূড়ান্ত চুক্তির জন্য বাকি ছোটখাটো বিষয়গুলো সমাধানে আরও নিবিড় আলোচনা প্রয়োজন। এই আলোচনার জন্য পরবর্তীতে জেনেভা বা অন্য কোনো নিরপেক্ষ স্থানে বৈঠক হতে পারে।

শান্তির পথে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তিতে নীতিগত সম্মতি একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। আবুধাবিতে গোপন বৈঠকে এই অগ্রগতি যুদ্ধের অবসানের পথে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যদিও চুক্তির চূড়ান্ত শর্তাবলী এবং ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে এখনো কাজ বাকি, তবে উভয় পক্ষের সম্মতি এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবকে ‘ভিত্তি’ হিসেবে স্বাগত জানানো ইঙ্গিত দেয় যে, যুদ্ধ বন্ধের একটি বাস্তব সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব এখন এই শান্তি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপের দিকে গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে, যা কোরীয় উপদ্বীপের সংঘাতের মতো অন্যান্য বৈশ্বিক অস্থিরতা নিরসনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এম আর এম – ২৩৭৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button