বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাঁরা অত্যন্ত আশাবাদী যে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম ও মধ্যবর্তী সময়ের নির্বাচন কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সম্পন্ন হবে। তিনি এই নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে বাংলাদেশের যাত্রা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, নির্বাচন ব্যাহত হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি বা আশঙ্কা নেই।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির হলরুমে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব মন্তব্য করেন। সভায় তিনি দলীয় অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়েও কথা বলেন। এই মন্তব্যের মাধ্যমে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে এক ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করলেন।
নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুলের আশাবাদ
নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ততই নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে আশাবাদী হচ্ছেন।
বিএনপি মহাসচিব তাঁর বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, “আমরা আশাবাদী, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই প্রথম ও মধ্যবর্তী সময়ের নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী।”
তাঁর এই বক্তব্য বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে উদ্যম ও সাহস সঞ্চার করেছে।তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে গণতন্ত্রের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেছে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে।”
ইতিবাচক পরিবেশ: অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ঘোষণার ফলে নির্বাচনকে ঘিরে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা
নির্বাচনী পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এ বিষয়েও মির্জা ফখরুল তাঁর মূল্যায়ন জানিয়েছেন।
উপযোগী পরিস্থিতি: তিনি মনে করেন, “বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট উপযোগী আছে।” এই স্থিতিশীলতা নির্বাচনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।
আশঙ্কা নেই: বিএনপির মহাসচিবের মতে, “এখন এমন কোনো অবস্থা নেই যেখানে নির্বাচন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনটা হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।” তাঁর এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, বিএনপি মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে।
দলীয় অভ্যন্তরীন প্রত্যাশা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা
নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ভেতরেও বিভিন্ন আসনে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে যে প্রতিযোগিতা চলছে, সে বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন।
বৃহৎ দলের বৈশিষ্ট্য: অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি বড় রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বিএনপি একটি বিশাল রাজনৈতিক দল; নদীর মতো। এখানে একেকটি আসনে ৪-৫ জন করে প্রার্থী থাকে।”
অসুবিধা নেই: তিনি মনে করেন, এই প্রতিযোগিতা দলের জন্য কোনো বড় সমস্যা নয়। “কিছু সমস্যা হবেই, বরাবরই হয়ে আসছে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং এতে বোঝা যায় বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল,” তিনি যোগ করেন। দলের অভ্যন্তরে প্রার্থীর প্রতিযোগিতা থাকা সত্ত্বেও ঐক্য বজায় থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম বন্দরে ‘হ্যাডলিঙ্ক’ প্রসঙ্গে মন্তব্য
রাজনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়েও বিএনপির মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
হ্যাডলিঙ্ক প্রদান: চট্টগ্রাম বন্দরে ‘হ্যাডলিঙ্ক’ প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম পোর্টকে হ্যাডলিঙ্ক দেয়া হয়েছে। তারা ভাল মনে করেছে দিয়েছে। এটা আমরা দেখব।”
পর্যবেক্ষণ: তাঁর এই বক্তব্য ইঙ্গিত করে যে, বিএনপি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে নজর রাখছে এবং ভবিষ্যতে এই বিষয়ে তাদের অবস্থান বা পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে পারে।
মতবিনিময় সভার প্রেক্ষাপট
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে দলীয় নেতাকর্মী এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
আইনজীবীদের ভূমিকা: মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির হলরুমে আইনজীবীদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের পথে আইনজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই তাঁদের সঙ্গে আলোচনা রাজনৈতিক কৌশল ও আইনি দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।
উপস্থিতি: মতবিনিময় সভায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক মখদুম সাব্বির মৃদুল সহ জেলার অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (কোট): “বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেছে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এতে করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিবাচক একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে।”
বিএনপির ইতিবাচক সুরের গুরুত্ব
বিএনপির মহাসচিবের এই আশাবাদী এবং ইতিবাচক বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আস্থার প্রতিফলন: দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং সরকার পতনের আন্দোলনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে এমন ইতিবাচক মন্তব্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থার কিছুটা হলেও প্রতিফলন ঘটায়।
কর্মী মনোবল: এই মন্তব্য দলীয় কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করবে এবং তাদের নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে উৎসাহিত করবে। অতীতে নির্বাচন নিয়ে সংশয় থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে যে দ্বিধা ছিল, এই আশাবাদ তা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।
রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা: প্রধান বিরোধী দলের নেতার এই ধরনের মন্তব্য দেশের সামগ্রিক রাজনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেশের আগামী নির্বাচনকে ঘিরে একটি ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরল। তাঁর আশাবাদ, কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই নির্বাচন হবে এবং বাংলাদেশ গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে এগিয়ে যাবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর তাঁর সন্তুষ্টি এবং অভ্যন্তরীণ দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বৃহৎ দলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি নির্বাচনের পরিবেশকে আরও অনুকূল করে তুলবে বলে আশা করা যায়। এখন দেশবাসী একটি সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে, যা মির্জা ফখরুলের আশাবাদের প্রতিফলন ঘটাবে।
এম আর এম – ২৩৭২,Signalbd.com



