সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে পিঠা তৈরির সময় ভুলবশত দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করার ঘটনা ঘটেছে। কালোজিরা ভেবে পিঠায় কীটনাশক মেশানো হলে ১১ জন একই পরিবারের সদস্য অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকালের মধ্যে সবাইকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া দেওয়া হয়েছে।
ঘটনা কোথায় ও কিভাবে ঘটলো?
ঘটনাটি ঘটে শ্যামনগরের রমজাননগর এলাকায় সোমবার (২৪ নভেম্বর)। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরিবারটি নতুন ঘর তৈরি করার আনন্দে এক পারিবারিক সমাবেশের আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্যরা, যার মধ্যে বড় থেকে ছোট, সকলেই ছিলেন।
পিঠা তৈরির সময় রান্নাঘরে রাখা দানাদার কীটনাশককে বৃদ্ধা জুলেখা বিবি ভুলবশত কালোজিরার সঙ্গে মিশিয়ে দেন। এরপর তৈরি পিঠা পরিবারের সদস্যরা খেতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে পিঠা খাওয়া সবাই একে একে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং দ্রুত তাদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে ভর্তিদের তালিকা
অসুস্থ হয়ে পড়া ১১ জনের মধ্যে ছিলেন:
- আকলিমা (৩৫)
- সুমাইয়া (২২)
- আইজা (২)
- মেহজাবিন (১০)
- জান্নাতি (১৫)
- আইয়ুব খান (৬০)
- আজিহা (১)
- উম্মে হাবিবা (২১)
- সামিয়া (৪)
- শারমিন (২৩)
- মিতা (৩৫)
এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন এক বছরের আজিহা এবং সবচেয়ে বড় আইয়ুব খান। সবাই একসাথে পরিবারিক আনন্দ অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছিলেন।
পুলিশের তদন্ত ও মন্তব্য
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক বিপ্লব হোসেন। তিনি জানান, এটি একটি দুঃখজনক কিন্তু সম্পূর্ণ ভুলবশত ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা। পিঠা তৈরির সময় পরিবারের একজন বৃদ্ধা রান্নাঘরে রাখা কীটনাশককে কালোজিরা ভেবে পিঠায় মিশিয়েছিলেন। পিঠা খাওয়ার পর পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
উপ-পরিদর্শক আরও জানান, বর্তমানে সবাই সুস্থ এবং ছাড়া পেয়েছেন। পুলিশ পরিবারকে সতর্ক করেছেন যে, রান্নাঘরে কোনো ধরনের কীটনাশক রাখা উচিত নয়।
চিকিৎসক ও হাসপাতালের মন্তব্য
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আক্রান্তদের তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু করা হয়। বিষক্রিয়ার ঝুঁকি কমাতে ওয়াশের মাধ্যমে দেহ থেকে কীটনাশক অপসারণ করা হয়। সব রোগী বর্তমানে সুস্থ এবং তাদের সবাইকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া দেওয়া হয়েছে।
ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, “পরিবারের সবাই নিরাপদে বাড়ি ফিরেছে। তবে এটি একটি সতর্কবার্তা যে, রান্নাঘরে কোনো ধরনের বিষ বা কীটনাশক রাখা উচিত নয়। ছোটোখাটো ভুলও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।”
কীটনাশকের প্রভাব ও সতর্কতা
প্রায়শই মানুষ রান্নাঘরে বিভিন্ন মসলা রাখে, কিন্তু কিছু ক্ষতিকারক পদার্থও ভুলক্রমে ব্যবহার করা হতে পারে। দানাদার কীটনাশক মুখে গেলে বা খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশলে তা শরীরের জন্য মারাত্মক বিপদ তৈরি করতে পারে। এটি শ্বাসকষ্ট, বমি, পেটের ব্যথা, মাথা ঘোরা এবং 심각 অবস্থায় মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, বাড়িতে কীটনাশক সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো মানা জরুরি:
- রান্নাঘরের মসলা ও খাবারের পাশেই কখনো কীটনাশক রাখা যাবে না।
- শিশুদের নাগালের বাইরে কীটনাশক রাখতে হবে।
- কীটনাশক ব্যবহার করার পর সবসময় ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
- প্যাকেজিংয়ে দেওয়া সতর্কতামূলক নির্দেশাবলী অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
- দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
ঘটনাস্থল এলাকাবাসীও শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, “পারিবারিক অনুষ্ঠানে এমন দুর্ঘটনা সত্যিই মন খারাপ করার মতো। বাড়িতে রান্না করার সময় সাবধান হওয়া প্রয়োজন।”
স্থানীয়রা আরও জানান, পরিবারের সবাই খুবই সংযত ও যত্নশীল। এ ধরনের দুর্ঘটনা সত্যিই নজিরবিহীন।
পিঠা উৎসব ও ঐতিহ্য
শ্যামনগর অঞ্চলে পিঠা তৈরি ও খাওয়া বিশেষ উৎসবের মতো আনন্দের অনুষ্ঠান। সাধারণত পরিবার, আত্মীয়-স্বজন মিলিত হয়ে পিঠা বানায় এবং খায়। তবে এই ঘটনাটি সকলকে সতর্ক করেছে যে, খাবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষামূলক দিক
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবারগুলোকে সচেতন হতে হবে। পিঠা বা অন্যান্য খাবার তৈরি করার সময় সব ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দূরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে শিশুদের নিরাপত্তা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
সার্বিক প্রভাব
এ ধরনের ঘটনা স্থানীয় সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। মানুষ আরও সতর্ক হচ্ছে রান্নাঘরে কী রাখবেন এবং খাবারের সঙ্গে কী মিশবেন না। এছাড়া, স্থানীয় হাসপাতাল ও পুলিশও পরিবার এবং জনগণকে নিয়মিত নিরাপত্তা নির্দেশনা দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে।
সাতক্ষীরার এই দুর্ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং পারিবারিক অনুষ্ঠানে সতর্কতা নিশ্চিত করা আবশ্যক। ভুলক্রমে কীটনাশক ব্যবহার শুধুমাত্র অসুস্থতা নয়, বরং বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ডা. জিয়াউর রহমান এবং স্থানীয় পুলিশ সবাইকে সতর্ক করেছেন: রান্নাঘরে বিষাক্ত পদার্থ রাখা যাবে না, শিশুদের কাছে কোনো ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ রাখাও ঠিক নয়।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকার পরিবারটি বর্তমানে সুস্থ এবং বাড়িতে ফিরে গেছে। তবে এই ঘটনা থেকে সবাই সচেতন হয়েছে যে, খাদ্য এবং রান্নাঘরে নিরাপত্তা সবসময় প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
MAH – 13982 I Signalbd.com



