বিশ্ব

সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো চালু হলো বার, বিক্রি হবে বিয়ার

Advertisement

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী মুসলিম দেশ সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে কঠোরভাবে মদপান ও মদ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। ১৯৫২ সাল থেকে দেশটিতে মদ ও অ্যালকোহল সম্পর্কিত যে কোনো কার্যক্রম কঠোরভাবে আইনত বন্ধ। কিন্তু সম্প্রতি এই কঠোর নিয়মে এসেছে একটি নতুন ধারার সূচনা। রাজধানী রিয়াদে প্রথমবারের মতো খোলা হয়েছে ‘এ-১২’ নামের একটি নতুন বার ও ক্যাফে, যেখানে পরিবেশন করা হচ্ছে অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ার ও অন্যান্য নন-অ্যালকোহলিক পানীয়।

দেশটির ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে ধরা হচ্ছে। যদিও দেশটিতে এখনও মদ বিক্রি বা মদপান সম্পূর্ণরূপে বৈধ নয়, তবে এই নতুন উদ্যোগ সৌদি আরবের বিনোদন ও পর্যটন খাতে এক নতুন দিক নির্দেশ করছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা নিউ আরব, ডন ও ফ্রান্স-২৪ এই খবর নিশ্চিত করেছে।

‘এ-১২’ ক্যাফে: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ

নতুন এই ক্যাফেটি শহরের বাণিজ্যিক অঞ্চলে অবস্থিত এবং এর পরিকল্পনা করা হয়েছে এমনভাবে যাতে এটি অন্যান্য আন্তর্জাতিক বারের সঙ্গে অভিজ্ঞতায় সমানতালে দাঁড়াতে পারে। এখানে পরিবেশ করা হয় এমন পানীয় যা মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় হিসেবে পরিচিত, কিন্তু সৌদি আরবে এগুলো সম্পূর্ণ নন-অ্যালকোহলিক

ক্যাফেটিতে নারী-পুরুষ একসাথে বসে পানীয় উপভোগ করতে পারছেন, যা দেশটির সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের দিকে একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। রিয়াদের নতুন এই বারটি ইতিমধ্যেই স্থানীয় ও বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করছে।

এ-১২-এর ভিতরের ডিজাইন এবং পরিবেশ সাধারণ বারের সঙ্গে প্রায় মিল রয়েছে। এখানে বসার আসন, লাইটিং, সাউন্ড সিস্টেম এবং অন্যান্য সুবিধা এমনভাবে পরিকল্পিত হয়েছে যাতে অতিথিরা একটি আধুনিক বার অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন।

মধ্যপ্রাচ্যের প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের অ্যালকোহল নীতি

উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, সৌদি আরব এবং কুয়েতে অ্যালকোহলের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অন্য অনেক দেশ, যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন শহরে সীমিত পরিসরে অ্যালকোহল বিক্রি করা যায়, কিন্তু সৌদি আরবে এখনও সর্বসাধারণের জন্য মদ বিক্রি সম্পূর্ণরূপে অবৈধ

তবে আগামী বছর থেকে সরকার পরিকল্পনা করছে অমুসলিম বিদেশী কূটনীতিকদের জন্য সীমিত পরিসরে মদের দোকান খোলার। এর আগে, ২০২৪ সালে রিয়াদের একটি দোকানকে বিশেষভাবে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল অমুসলিম কূটনীতিকদের জন্য মদ বিক্রি করার জন্য। এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য সৌদি আরবকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

সৌদি আরবে এই ধরনের নতুন বার চালু হওয়া শুধুমাত্র বিনোদন খাতের জন্য নয়, বরং অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। দেশের যুব সমাজ এবং পর্যটকরা এখন আরও বৈচিত্র্যময় বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছে। সরকার আশা করছে, অ্যালকোহলমুক্ত বার এবং ক্যাফে খুলে দেশটির পর্যটন খাত এবং ব্যবসায়িক সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে

সাহসী এই উদ্যোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের নন-অ্যালকোহলিক পানীয়গুলো এখন সৌদি আরবের বাজারে বিক্রি হতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তন দেশের বিনোদন ও সামাজিক পরিবেশের ধারা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ

সৌদি আরবের এই উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ইতিবাচকভাবে দেখছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নতুন ধরণের বিনোদন কেন্দ্র খোলা মানে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সূচনা। রিয়াদের এ-১২ ক্যাফে প্রমাণ করছে যে, সৌদি সমাজ এখন আধুনিক এবং নিয়ন্ত্রিত বিনোদনের প্রতি উন্মুক্ত হতে শুরু করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগ্রহ বৃদ্ধি করতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রবৃদ্ধির দিক খুলে দিতে পারে।

নতুন প্রজন্মের সৌদি যুবকদের জন্য সুযোগ

সৌদি যুবক ও যুবতীরা এই ধরনের নতুন বিনোদন কেন্দ্রকে ইতিমধ্যেই প্রশংসা করছেন। বিশেষ করে অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ার এবং বিভিন্ন ধরনের নন-অ্যালকোহলিক পানীয় পরিবেশন করার সুযোগ তাদের জন্য একটি নতুন সামাজিক অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

এছাড়াও, এই উদ্যোগ নারী এবং পুরুষদের সামাজিকভাবে মিলিত হওয়ার সুযোগ প্রদান করছে। এটি দেশের সামাজিক কাঠামোর ধীরে ধীরে পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবেও ধরা হচ্ছে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

সৌদি সরকার আরও কিছু বছর ধরে পর্যটন, বিনোদন এবং সামাজিক নীতি পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করছে। পর্যটন খাতে নতুন বিনিয়োগ এবং বিদেশী কূটনীতিকদের জন্য সীমিত মদ বিক্রির সুযোগ দেশের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বিনোদন খাতকে আরও উন্নত করবে

এই পরিবর্তন সৌদি আরবকে মধ্যপ্রাচ্যে আরও আধুনিক এবং বৈচিত্র্যময় বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত করতে সাহায্য করবে।

সৌদি আরবের এই নতুন বার, যেখানে পরিবেশন করা হচ্ছে অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ার, শুধুমাত্র একটি বিনোদন কেন্দ্রের উদাহরণ নয়, বরং এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রতীক। দেশের যুব সমাজ, পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরা এর ইতিবাচক প্রভাব অনুভব করতে শুরু করেছেন।

রিয়াদের এ-১২ ক্যাফে প্রমাণ করছে যে, সংস্কৃতির সঙ্গে আধুনিকতার সমন্বয় সম্ভব এবং মধ্যপ্রাচ্যের কঠোর সামাজিক নিয়মের মধ্যেও নতুন ধরণের বিনোদনকে গ্রহণযোগ্য করা যায়।

সৌদি আরবের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যটন ও বিনোদন খাতে দেশটিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

MAH – 13980 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button