বিশ্ব

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত চার ফিলিস্তিনি

Advertisement

গাজার অভ্যন্তরে ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে অন্তত চারজন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। একই সঙ্গে হামলায় বহু নারী ও শিশু আহত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) গাজার ওপর প্রায় ৫০০ বার হামলা চালিয়েছে। সোমবার (২৪ নভেম্বর) এই ধারাবাহিক হামলায় কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) এই ঘটনায় তাদের কাছে একটি ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ উদ্ধার করার কথাও ঘোষণা করেছে।

হামলার বিস্তার এবং ক্ষয়ক্ষতি

নিহতদের মধ্যে দক্ষিণ বানি সুহেইলা শহরের একজন ফিলিস্তিনি পুরুষ অন্তর্ভুক্ত, যাকে ড্রোন হামলার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণাধীন ‘ইয়োলো লাইনের’ বাইরে।

উত্তর গাজা সিটির একজন শিশুও হামলায় প্রাণ হারিয়েছে। স্থানীয় সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, হামলায় আহত শিশুদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার গাজা সিটি প্রতিনিধি তারেক আবু আজুম জানান, পুরো দিনব্যাপী গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত ছিল। এতে বিমান, হেলিকপ্টার স্ট্রাইক এবং আর্টিলারি হামলার মাধ্যমে বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে।

তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ইয়োলো লাইনের বাইরে গাজার পূর্বাঞ্চলের অনেক এলাকা ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার ও হতাহতের সংখ্যা

মধ্যগাজার মাঘাজি ক্যাম্পে সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ এবং রেড ক্রসের সহায়তায় একই পরিবারের আট সদস্যের মরদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫৮২টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাছাড়া, এখনও ৯,৫০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছে।

মার্কিন সমর্থিত মানবিক সংস্থা জিএইচএফ ঘোষণা করেছে যে তারা গাজায় তাদের কার্যক্রম শেষ করছে। তারা উল্লেখ করেছে, অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী তাদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের মে মাস থেকে এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে কমপক্ষে ৮৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

চলমান সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট

উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী এবং বসতিগোষ্ঠীর হাতে অন্তত ১,০৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২২৩ শিশু রয়েছে। এই সংঘর্ষে আরও ১০,৬১৪ জন আহত এবং ২০,৫০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি গ্রেফতার হয়েছে।

গাজা অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের হামলার মুখোমুখি হচ্ছে। বসতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষ, নিরাপত্তা চেকপোস্ট, বিমান হামলা এবং আর্টিলারি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে সাধারণ মানুষ সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষত শিশু, মহিলা এবং বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

মানবিক সংকট এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চরম চাপের মধ্যে রয়েছে। হাসপাতালগুলো অতিরিক্ত রোগী নিয়ে দুর্বল অবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। পর্যাপ্ত ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা কমে গেছে।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠন এই হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যায়।

এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে। তবে সাম্প্রতিক হামলার পর পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা এই হামলার ফলে গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সিভিল ডিফেন্স এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা মৃতদেহ উদ্ধার, আহতদের চিকিৎসা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

ভবিষ্যতের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি একদিকে মানবিক সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি এবং স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট করছে। সাম্প্রতিক হামলা প্রমাণ করেছে যে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফিলিস্তিনি জনগণকে নিরাপদ রাখতে এবং ভবিষ্যতে আরও প্রাণহানি রোধ করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তৎপর হবার বিকল্প নেই।

MAH – 13978 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button