রাজনীতি

প্রার্থীদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বন্ধের নির্দেশ জামায়াত আমিরের

Advertisement

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় দলীয় প্রার্থীদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সারা দেশে দলীয় শাখা ও সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণার কারণে সৃষ্ট দুর্ঘটনা ও আহতের প্রেক্ষাপটে দলীয় প্রধান এই তাৎক্ষণিক কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) এ বিষয়ে দলটির সহকারী সেক্রেটারি এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গণমাধ্যমকে জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে অধস্তন শাখা ও প্রার্থীদের কাছে ইতোমধ্যে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। মূলত নির্বাচনী প্রচারণায় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দলীয় কর্মীদের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

আমিরের নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তের কারণ

জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচনকে সামনে রেখে জননিরাপত্তার প্রশ্নে আপসহীন থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

নির্দেশনার সারমর্ম: আমিরে জামায়াত কর্তৃক পাঠানো নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন জেলা/মহানগরী নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল র‌্যালি ও মোটর শোভাযাত্রা লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে কয়েকটি দুর্ঘটনা ও আহতের প্রেক্ষাপটে সম্মানিত আমিরে জামায়াত এখন থেকে সব জেলা/মহানগরী নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল র‌্যালি ও শোভাযাত্রার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।”

তাৎক্ষণিক কারণ: এই ধরনের শোভাযাত্রা বা র‍্যালির সময় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াই এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ। দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকেই প্রধান বিবেচ্য হিসেবে দেখা হয়েছে।

দলীয় বাধ্যবাধকতা: জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক কাঠামোয় আমিরের নির্দেশনার প্রতি কঠোর অনুশাসন মেনে চলার রীতি রয়েছে। ফলে প্রার্থীদের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা একটি বাধ্যতামূলক নির্দেশ হিসেবে কার্যকর হবে।

সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলোর পটভূমি

ডা. শফিকুর রহমানের এই কঠোর নির্দেশনার পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা কয়েকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ঘটনা।

সাতক্ষীরার মর্মান্তিক ঘটনা: গত শনিবার সাতক্ষীরায় জামায়াতের এক প্রার্থীর শোভাযাত্রার সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ফজর আলী নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন। এই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে শোক ও প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল।

রংপুরে কর্মী নিহত: এর কিছুদিন আগে গত ১৪ নভেম্বর রংপুরে জামায়াতের নির্বাচনী প্রচারণার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় দলটির একজন কর্মীও নিহত হন।

আহত হওয়ার ঘটনা: দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় শোভাযাত্রা চলাকালীন আহত হওয়ার একাধিক খবরও এসেছে। এই ধরনের ঘটনাগুলো শুধু দলীয় কর্মীদের জন্য নয়, সাধারণ জনগণের জন্যও ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচারণার কৌশল

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জামায়াতে ইসলামী এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে।

প্রার্থী চূড়ান্তকরণ: জামায়াতে ইসলামী দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আসনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে এবং তারা প্রচারণার কাজ শুরু করে দিয়েছে।

প্রচারণার ধরন: প্রার্থীরা বিভিন্নস্থানে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন, যার মধ্যে ছিল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, গণসংযোগ, পথসভা ইত্যাদি। এই শোভাযাত্রাগুলো সাধারণত শক্তি প্রদর্শনের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কৌশলগত পরিবর্তন: আমিরের নতুন নির্দেশনার ফলে প্রার্থীরা এখন মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার পরিবর্তে অন্যান্য প্রচারণার কৌশল যেমন: গণসংযোগ, ছোট ছোট পথসভা এবং ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারে জোর দিতে পারেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এর প্রভাব ও বিশ্লেষণ

জামায়াত আমিরের এই সিদ্ধান্ত শুধু দলীয় কর্মীদের মধ্যেই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও একটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দায়িত্বশীলতার নজির: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াত আমিরের এই পদক্ষেপটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণের একটি উদাহরণ। প্রচারণায় শক্তি প্রদর্শন না করে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।

অন্যান্য দলের প্রতি বার্তা: জামায়াতের এই সিদ্ধান্ত দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও একটি বার্তা বহন করছে। নির্বাচনী প্রচারণার নামে সড়ক বিশৃঙ্খলা বা দুর্ঘটনা সৃষ্টি না করে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ প্রচারণায় মনোনিবেশ করার একটি নজির স্থাপিত হলো।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রভাব: সাধারণত, নির্বাচনের সময় মোটরসাইকেল র‍্যালিগুলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আমিরের এই নির্দেশনা নির্বাচনী আচরণবিধি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনকেও সহযোগিতা করবে।

দলীয় নেতার বক্তব্য: জননিরাপত্তা সবার আগে

জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এই সিদ্ধান্তের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (কোট): “সংগঠনের পক্ষ থেকে অধস্তন শাখা ও প্রার্থীদের এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। জননিরাপত্তা এবং দুর্ঘটনায় প্রাণহানি রোধ করাই আমিরে জামায়াতের এই সিদ্ধান্তের প্রধান উদ্দেশ্য। নির্বাচন উপলক্ষে কর্মীদের জীবন বিপন্ন হোক, তা আমরা চাই না।”

কঠোরতা: তিনি আরও জানান, এই নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। দলীয় শৃংখলা বজায় রাখতে এই ধরনের নির্দেশনার ক্ষেত্রে কোনো শিথিলতা দেখানো হবে না।

নিরাপদ প্রচারণার দিকে যাত্রা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের দলীয় প্রার্থীদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বন্ধের নির্দেশ একটি সময়োপযোগী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন দলীয় কর্মীদের জীবন রক্ষা করবে, তেমনি সাধারণ জনগণের জন্য নির্বাচনী পরিবেশকে আরও নিরাপদ করবে। সাতক্ষীরা ও রংপুরের মতো মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এই ধরনের পদক্ষেপ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সকল দলের প্রচারণায় সড়ক নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

এম আর এম – ২৩৬৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button