বিশ্ব

সিন্ধু নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে পাকিস্তানের তীব্র নিন্দা

Advertisement

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যেকার বিদ্যমান উত্তেজনার মধ্যে নতুন করে তীব্র অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্যের কারণে। ভারতের সিন্ধু প্রদেশ সম্পর্কিত তার বক্তব্যকে পাকিস্তান ‘বিভ্রান্তিকর’ এবং ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

রবিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পাকিস্তান বলেছে, রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য শুধু ইতিহাস বিকৃত করছে না, এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সরাসরি হুমকি।

রাজনাথ সিংয়ের বিতর্কিত বক্তব্য

ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজনাথ সিং মন্তব্য করেছেন, “আজ সিন্ধুর ভূমি হয়তো ভারতের অংশ নয়, তবে সভ্যতার দিক থেকে সিন্ধু সব সময়ই ভারতের অংশ থাকবে। আর ভবিষ্যতে সীমান্ত পরিবর্তন হতে পারে। কে জানে, হয়তো আগামীতে সিন্ধু আবার ভারতের কাছে ফিরে আসতে পারে।”

রাজনাথ সিং আরও দাবি করেছেন, তাঁর প্রজন্মের সিন্ধুর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ কখনোই পুরোপুরি এই প্রদেশের পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া মেনে নেননি। এই মন্তব্যের মাধ্যমে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সরাসরি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সীমানা ও সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কড়া প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য **‘সম্প্রসারণবাদী হিন্দুত্ববাদী মানসিকতা’**কে প্রতিফলিত করছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, এই ধরনের বক্তব্য আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, স্বীকৃত সীমান্তকে চ্যালেঞ্জ এবং দুই দেশের মধ্যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ভারতের নেতাদের উচিত এই ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য থেকে বিরত থাকা এবং নিজের দেশের নাগরিক, বিশেষ করে সংখ্যালঘু ও দুর্বল সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার দিকে মনোযোগ দেওয়া। পাকিস্তান আহ্বান জানিয়েছে, ভারতের উচিত ধর্মীয় সহিংসতায় জড়িত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং ঐতিহাসিক বিকৃতির কারণে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করা।

নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সংখ্যালঘু অধিকার

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করিয়ে দিয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার। সেখানে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে সহিংসতার চক্র চলমান। মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারতের উচিত এই অঞ্চলগুলোর সমস্যা সমাধানের জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া।

কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান

বিবৃতিতে পাকিস্তান পুনরায় কাশ্মীর ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। পাকিস্তান জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং কাশ্মীরি জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সমাধান চায়। পাকিস্তান আশা প্রকাশ করেছে, ভারত কাশ্মীরের সমস্যার ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, তারা ন্যায়বিচার এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে দেশের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার দায়িত্ব তারা অব্যাহত রাখবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনাথ সিংয়ের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু পাকিস্তান নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

প্রধান বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করে না, বরং দুই দেশের মধ্যে বৈষম্য ও দূরত্ব আরও বৃদ্ধি করতে পারে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, উভয় দেশকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দিতে হবে এবং ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা থেকে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করতে হবে।

ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট

সিন্ধু প্রদেশ ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় থেকে ইতিহাসের নানা বিতর্কে আবদ্ধ। ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী এই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় পরিচয়কে ভারতের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে দেখেন। পাকিস্তানের পক্ষের বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের মন্তব্য উভয় দেশের মধ্যে শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি স্বরূপ।

রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্যে পাকিস্তান তীব্র নিন্দা জানিয়ে একথা স্পষ্ট করেছে যে, আন্তর্জাতিক আইন এবং স্বীকৃত সীমান্তের প্রতি সম্মান রাখা উভয় দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান আশা করছে, ভারতের নেতারা নিজেদের দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা, সংখ্যালঘু অধিকার এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় মনোনিবেশ করবেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উভয় পক্ষের কূটনৈতিক সংলাপের বিকল্প নেই। উস্কানিমূলক বক্তব্য ও রাজনৈতিক হুমকির পরিবর্তে বাস্তব সমাধান ও শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপই দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।

MAH – 13969 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button