আবহাওয়া

এবার সৌদি আরব ও ইরাকে ভূমিকম্পের তীব্র কাঁপন

Advertisement

মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-প্রাকৃতিক পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। রোববার (২৩ নভেম্বর) সৌদি আরব ও ইরাকে পৃথকভাবে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সৌদি জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে ৩.৪৩ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে, প্রতিবেশী ইরাকে ৫.০৯ মাত্রার ভূকম্পনের খবর পাওয়া গেছে।

সৌদি আরবে ভূমিকম্পের উৎপত্তি ও প্রভাব

সৌদি জিওলজিক্যাল সার্ভের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম ‘সৌদি গেজেট’ জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়েছে মদিনা অঞ্চলের আল-আইস ও তাবুক অঞ্চলের উমলুজ গভর্নরেটের মধ্যে অবস্থিত হারেত আল-শাকা থেকে প্রায় ৮৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।

হারেত আল-শাকা এলাকাটি সৌদি আরবের আগ্নেয়গিরির ল্যাভা-গঠিত অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে অনুভূত হয়। সৌদি ভূ-তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পটি এতটা তীব্র ছিল না যে বড় ধরনের ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা ভীতিহীনভাবে ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

ইরাকে রেকর্ডকৃত ভূমিকম্প

সৌদি জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, একই সময়ে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে ৫.০৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ইরাকের মাউন শহরের আশেপাশের অঞ্চলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি প্রাথমিকভাবে মৃদু হলেও ভূমিকম্পটি বড় আকারের ভবিষ্যৎ কম্পনের ইঙ্গিত দিতে পারে।

স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে। বাড়ি ও ভবনগুলোতে নিরাপদ স্থানে থাকা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-প্রাকৃতিক ঝুঁকি

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রতি তুলনামূলকভাবে সংবেদনশীল। সৌদি আরব এবং ইরাকের মতো দেশগুলোতে ভূমিকম্প সাধারণত কম তীব্রতায় হয়। তবে আগ্নেয়গিরি বা ল্যাভা-প্রবাহযুক্ত অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রভাব বেশি অনুভূত হতে পারে।

ভূ-তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি আরবের তাবুক ও মদিনা অঞ্চলের আগ্নেয়গিরির ল্যাভা-প্রবাহপূর্ণ ভূখণ্ড ভূমিকম্পের জন্য অপেক্ষাকৃত সংবেদনশীল। এই ধরনের অঞ্চলে ভূমিকম্প সাধারণত মৃদু হয়, তবে পুনরাবৃত্তি ঘটলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

ইতিহাসে মধ্যপ্রাচ্যের ভূমিকম্প

মধ্যপ্রাচ্যে ভূমিকম্পের ঘটনা নতুন নয়। ইরাক ও সৌদি আরবের কিছু অঞ্চলে বিগত দশকে মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প ঘটেছে। বিশেষভাবে ১৯৯৫ সালে সৌদি আরবের তাবুক অঞ্চলে ৪.৮ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছিল। ইরাকে ২০০৩ সালে ৬.২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।

এই ইতিহাস আমাদের শেখায় যে, ভূমিকম্পের প্রভাব নির্ভর করে উৎপত্তিস্থল, মাটি ও ভূ-তাত্ত্বিক কাঠামোর উপর।

ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতা ব্যবস্থা

সৌদি আরব এবং ইরাকের ভূ-তাত্ত্বিক সংস্থাগুলো নিয়মিত ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করছে। ভূমিকম্পের রেকর্ড এবং বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ঝুঁকি সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সৌদি জিওলজিক্যাল সার্ভে বলছে, মাটির কম্পন ও আগ্নেয়গিরি অঞ্চলের মনিটরিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষভাবে হারেত আল-শাকা এবং তাবুক অঞ্চলের ঘনবসতি এলাকায় ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের প্রভাব কমানোর জন্য যথাযথ পরিকল্পনা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক ভূ-তাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

ভূ-তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-প্রাকৃতিক ঝুঁকি অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কম হলেও সম্পূর্ণ অবহেলা করা যায় না। সৌদি আরব ও ইরাকের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের তথ্য আন্তর্জাতিক ভূ-তাত্ত্বিক সংস্থাগুলোও গ্রহণ করছে।

বিশ্বব্যাপী ভূ-তাত্ত্বিক গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের মৃদু ভূমিকম্প ভবিষ্যতের বড় কম্পনের পূর্বাভাস হিসেবে ধরা যেতে পারে। তাই ভূমিকম্প সংক্রান্ত সতর্কতা ও প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ।

বাসিন্দাদের নিরাপদ থাকার পরামর্শ

স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা সাধারণ মানুষকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে:

  1. ঘরে থাকাকালীন নিরাপদ স্থানে অবস্থান করুন, যেমন শক্তিশালী টেবিলের নিচে বা স্থির দেওয়ালের পাশে।
  2. ভূমিকম্পের সময় লিফট ব্যবহার না করে বাইরে বের হবেন না।
  3. শিশু ও প্রবীণদের বিশেষ যত্ন নিন।
  4. জরুরি যোগাযোগের নম্বর এবং স্থানীয় উদ্ধারকর্মীদের যোগাযোগ রাখুন।

ভূমিকম্প ও ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য। বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হলে ক্ষতির সম্ভাবনা কমানো সম্ভব।

সৌদি আরব ও ইরাকে মৃদু ভূমিকম্পের ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-প্রাকৃতিক ঝুঁকি নিয়ে নতুন সতর্কতা তৈরি করেছে। যদিও বড় ধরনের ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবুও সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

ভূ-তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই ধরনের মৃদু ভূমিকম্প প্রায়শই বড় কম্পনের পূর্বাভাস হতে পারে। তাই মানুষকে নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা নেওয়া, সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা এবং পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

MAH – 13962 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button