রাজনীতি

নামাজের ইমাম সমাজের ইমাম হলে মুক্তি: জামায়াত আমীর

Advertisement

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সেদিনই সমাজে সত্যিকারের মুক্তি আসবে, যখন নামাজের ইমাম শুধুমাত্র মসজিদের ইমামই নয়, সমাজের ইমাম হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হবেন।

রবিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর আগারগাঁওস্থ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় ও সামাজিক সম্মেলনে এই বক্তব্য দেন ডা. শফিকুর রহমান। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাকী, যিনি সম্মিলিত ইমাম-খতীব পরিষদের আহ্বায়ক। সম্মেলনের মূল আলোচনার অংশ হিসেবে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করেন সংগঠনের সদস্যসচিব মুফতী আজহারুল ইসলাম, এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মুফতী শরিফুল্লাহ ও মুফতী মিনহাজ উদ্দিন।

ডা. শফিকুর রহমানের ভাষ্য, “আমাদের খতিব এবং ইমামরা কারও করুণার পাত্র হবেন না। তাদের আসল মর্যাদা তাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। মসজিদের কমিটি খতিব ও ইমামের পরামর্শে কাজ করবে। এটাই আমাদের চাওয়া।”

তিনি আরও বলেন, “যখন মসজিদে নামাজের ইমাম সমাজেরও পথপ্রদর্শক হবেন, তখনই আমরা সত্যিকারের শান্তি ও মুক্তি পেতে পারব। কুরআনের নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষায় পরিচালিত সমাজ ছাড়া মানবিক শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। প্রচলিত তন্ত্রমন্ত্র বা বাহ্যিক পদ্ধতিতে শান্তি স্থাপন সম্ভব নয়, আমাদের নবীজীর নির্দেশিত পথে ফিরে যেতে হবে।”

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা যখন জন্মগ্রহণ করি, তখন আমাদের ইমাম আমাদের পথপ্রদর্শক। মৃত্যু পর্যন্ত তারা আমাদের সমাজের নির্দেশক। মসজিদের মিম্বার থেকে আসা নৈতিক ও সামাজিক ফয়সালাই সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।”

সম্মেলনে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
  • ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর)
  • বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ
  • এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম
  • গণধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নূর
  • বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী
  • জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফিন্দি
  • হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীরের প্রতিনিধি মুফতী হাবিবুর রহমান কাসেমী

এছাড়াও দেশের বিশিষ্ট উলামা-মাশায়েখ অংশ নেন। এদের মধ্যে ছিলেন:
মাওলানা শায়খ আহমদুল্লাহ, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী, মুফতী হারুন ইজহার, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী, মুফতী জসীম উদ্দিন রাহমানী, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, মুফতী বশিরউল্লাহ, মাওলানা রেজাউল করিম আবরার, মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম কাসেমী, মাওলানা আনোয়ারুল হক, মুফতী তাসলিম আহমদ, মুফতী লোকমান হোসাইন আমিনী ও মাওলানা মোজাম্মেল হক।

ডা. শফিকুর রহমানের বক্তৃতা মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কেন্দ্রীভূত:

  1. খতিব ও ইমামের সামাজিক মর্যাদা – খতিব-ইমামদের স্থান শুধু মসজিদে সীমাবদ্ধ নয়, তাদের সমাজের নৈতিক ও সামাজিক নির্দেশক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
  2. কুরআনের ভিত্তিতে সমাজ পরিচালনা – দেশকে কেবল মানবিক বা প্রথাগত নিয়মে নয়, কুরআনের নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষার আলোকে পরিচালিত করতে হবে।
  3. সমাজে সত্যিকারের শান্তি ও মুক্তি – ইসলামী শিক্ষার মূলমন্ত্রের আলোকে পরিচালিত সমাজেই শান্তি, ন্যায় ও মানবিক মর্যাদা বজায় থাকবে।

জামায়াতের আমীর বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, সমাজের নৈতিক ফয়সালা মসজিদের মিম্বার থেকে আসবে। এই ধারণার মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বকে সমান্তরাল অবস্থানে দেখতে চেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, মসজিদ শুধু নামাজের জন্য নয়, এটি হবে সমাজ পরিচালনার কেন্দ্র।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব এবং সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে যে, খতিব ও ইমামের নেতৃত্বে সমাজের নৈতিক ও সামাজিক সংকট সমাধান সম্ভব।

ডা. শফিকুর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমান সময়ে সমাজে ধর্মীয় ও নৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি। তিনি মনে করান যে, যদি সমাজ কুরআনের শিক্ষায় পরিচালিত হয়, তাহলে সমগ্র জাতি শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করবে।

সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য আলোচ্য বিষয় ছিল, মসজিদ কমিটির কাঠামো এবং খতিব-ইমামের পরামর্শের গুরুত্ব। এখানে সকল ধর্মীয় নেতারা একমত হয়েছেন যে, মসজিদ কমিটি কখনও রাজনৈতিক বা বাহ্যিক চাপের অধীনে কাজ করতে পারবে না।

ডা. শফিকুর রহমানের এই বক্তৃতা সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মহলে ব্যাপক প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ইসলামী সমাজে ইমামদের মর্যাদা ও নেতৃত্বের গুরুত্ব পুনর্নির্ধারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

MAH – 13960 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button