শিক্ষা

ভূমিকম্পের কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সকল একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত

Advertisement

সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপ এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম আগামী ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার (২৩ নভেম্বর) এক জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের অনুমোদিত এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

এই সিদ্ধান্তের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষাসমূহও ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমানো এবং প্রয়োজনে তাঁদের অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দেওয়াই এই সাময়িক বন্ধ ঘোষণার মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের কারণ ও সময়সীমা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ জরুরি বৈঠক শেষে এই সাময়িক ছুটি ঘোষণা করেছে। এটি মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট উদ্বেগ প্রশমনের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।

বন্ধের কারণ: অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক প্রবল ভূমিকম্পের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা নিরসনের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কে আছেন এবং বাড়ি যেতে চেয়েছেন।

সময়সীমা: আগামী ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। নোটিশে জানানো হয়েছে, আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রম যথারীতি পুনরায় শুরু হবে।

স্থগিত হওয়া পরীক্ষা ও সম্ভাব্য নতুন সূচি

একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষাসমূহও স্থগিত করা হয়েছে।

পরীক্ষা স্থগিত: ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত যে সকল পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো আপাতত স্থগিত থাকবে।

নতুন সূচির ঘোষণা: কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলোর নতুন সূচি পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মিতভাবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব

ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।

মানসিক চাপ নিরসন: কর্তৃপক্ষ মনে করে, এই সাময়িক বিরতি শিক্ষার্থীদেরকে মনস্তাত্ত্বিক চাপ থেকে মুক্তি দেবে এবং তারা নতুন উদ্যমে পড়াশোনায় ফিরতে পারবে।

অভিভাবকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ: ছুটি ঘোষণার আরেকটি কারণ হলো শিক্ষার্থীদেরকে অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দেওয়া। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিক সহায়তা পাবে এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ কমবে। অনেক শিক্ষার্থীর বাড়ি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হওয়ায় দ্রুত যোগাযোগ করা জরুরি।

অন্যান্য মেডিকেল কলেজের পরিস্থিতি

ঢাকা মেডিকেল কলেজের এই সিদ্ধান্তের পর দেশের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয় কি না, সেই বিষয়ে নজর রাখছে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সমন্বিত সিদ্ধান্ত: সাধারণত একটি বৃহৎ ও কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও তা অনুসরণ করে। তবে এই বিষয়ে অন্য মেডিকেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা: দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা বা বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাধারণ নির্দেশনা আছে কি না, সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম: “ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমানো এবং প্রয়োজনে অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যেই এ সময় পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষাগুলোও ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।”

আবাসিক হল ও হাসপাতালের কার্যক্রম

একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও এর সঙ্গে সংযুক্ত হাসপাতালের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে।

হলের নির্দেশনা: আবাসিক হলগুলোতে থাকা শিক্ষার্থীদেরকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী হল ত্যাগের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

হাসপাতাল পরিষেবা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেশের একটি অন্যতম প্রধান চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। এখানে রোগীদের ভিড় ও চাপ সব সময় বেশি থাকে। তাই একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা, ইন্টার্নশিপ এবং জরুরি সেবা যথারীতি চালু থাকবে। শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ক্লাস ও পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে ছুটি দেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্তটি সাম্প্রতিক ভূমিকম্প পরবর্তী মানবিক বিবেচনা ও দুর্যোগের প্রভাবকে গুরুত্ব দেওয়ার একটি পদক্ষেপ। যদিও এই সাময়িক বিরতি পরীক্ষা ও ক্লাসের সূচিতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটাবে, তবে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এটি অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বার্তা যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কেবল শারীরিক নিরাপত্তা নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ক্লাস ও পরীক্ষাগুলো পুনরায় শুরু হলে শিক্ষার্থীদের জন্য একাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা যায়।

এম আর এম – ২৩৪৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button